রাধাষ্টমীর ব্রতকথা

    


 ব্রতের দ্রব্য- শাড়ী, মধুপর্কের বাটি, আসনাঙ্গুরীয়, নৈবেদ্য, ধুপ, দীপ,ধুনা, ফুল, তুলসী, দূর্বা, বেলপাতা, দক্ষিণ।

    ব্রতের ফল- এই ব্রত করলে নর-নারী সর্বপ্রকার পাপ-মুক্ত হয়।

    ব্রতের কথা- ঋষি শৌনক সুতকে জিজ্ঞাসা করলেন- হে সুত ! অন্যান্য দেবতাদের উপাসনার চেয়ে শ্রীকৃষ্ণের আরাধনাই শ্রেষ্ঠ বলে জানি।আরও শুনেছি, তাহাপেক্ষা শ্রীমতি রাধারাণীর আরাধনা অধিকতর পুণ্যপ্রদ ও শ্রেষ্ঠ।অতএব শ্রীরাধার অর্চনা বিষয়ে কোনও ব্রতাদির কথা কথা বলুন।

    সুত বলেন--হে ঋষিগণ! আমি একটা গোপনীয় ব্রতের কথা বলছি শুনুন।একদিন দেবর্ষী নারদ শ্রীকৃষ্ণের নিকটে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন--ভগবান।আপনার অনেক কথা শুনেছি, এখন শ্রীমতী রাধিকার জন্মদিনের ব্রত শুনতে ইচ্ছা করি।

    শ্রীকৃষ্ণ বললেন --দেবর্ষি ! তুমি আমার পরম ভক্ত।সেজন্য তোমার কাছে বলছি, শ্রবণ করো।



কোনও এক সময় সূর্যদেব ত্রিলোক ভ্রমণ করতে করতে নানাপ্রকার ঐশ্বর্য দেখে মনে মনে তপস্যার সংকল্প করে, মন্দর পর্বতের গুহায় কঠোর তপস্যা শুরু করেন।এইরূপে দীর্ঘদির গত হলো।সূর্যের কঠোর তপস্যা আর পৃথিবী দীর্ঘদিন অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকায় দেবতারা ভীত হলেন।ইন্দ্র দেবগনসহ আমার কাছে এসে সব কথা বলতে আমি বললাম, দেবগণ ! সূর্য থেকে তোমাদের কোনো ভয় নাই।তোমরা নিজ নিজ স্থানে যাও।আমি সূর্যদেবকে তপস্যা থেকে ক্ষান্ত করবো।

    তারপর আমি সূর্যের কাছে গেলাম।সূর্য আমাকে দেখে খুব আনন্দিত হলেন।তিনি বললেন-- হে শ্রীহরি ! আপনার দর্শন পেয়ে আমার জন্ম তপস্যা সার্থক হলো।যিনি সৃষ্টি স্থিতি  সংহার কর্তা, ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর যাঁকে সবসময় চিন্তা করেন তাঁকে দর্শন করে আমি ধন্য হলাম।

     সন্তুষ্ট হয়ে সূর্যকে বললাম-- হে দিবাকর।তুমি তপস্যায় সিদ্ধিলাভ করেছো।এখন বড় প্রার্থনা কর।তুমি আমার পরম ভক্ত, সেজন্যই তোমাকে দর্শন দিলাম।এই কথা শুনে সূর্য বললেন-- আমাকে একটি গুণবতী কন্যার বর দিন।আপনি চিরদিন সেই কন্যার বশীভূত থাকবেন।এছাড়া আমার আর কোনোও ইচ্ছা নেই।

    আমি তথাস্তু বলে তাকে বললাম-- এই ত্রিলোকে আমি একমাত্র শ্রীরাধিকারই বশীভূত।শ্রীমতী রাধা এবং আমাতে কোনও প্রভেদ নেই।আমি পৃথিবীর ভার লাঘবের জন্য বৃন্দাবনের নন্দালয়ে অবতীর্ণ হবো।তুমিও সেখানে বৃষভানু নামে রাজা হয়ে জন্মগ্রহণ করবে।শ্রীমতী রাধা তোমার কন্যারূপে অবতীর্ণ হবে।

    তারপর শ্রীহরি মথুরায় জন্মগ্রহণ করে নন্দালয়ে এলেন।সূর্যদেব বৈষ্যকূলে জন্মগ্রহণ করে বৃষভানু রাজা হলেন।গোপকন্যা কীর্তিদার সঙ্গে তার বিবাহ হলো।যথাকালে ভাদ্রমাসের শুক্লপক্ষে অষ্টমী তিথিতে বিশাখা নক্ষত্রে কীর্তিদার গর্ভে শ্রীমতী রাধিকা জন্মগ্রহণ করলেন।গোপ-গোপীরা আনন্দোৎসবে মেতে উঠলেন।আমার মায়ায় মুগ্ধ হয়ে রাধিকা আমাকেই পতিত্বে বরণ করতে ইচ্ছা করলেন।

    যথাকালে আয়ান ঘোষের সঙ্গে শ্রীরাধার বিবাহ হলো বটে কিন্তু আমাকে পরম পুরুষজ্ঞানে আমারসঙ্গে বিহার করতে লাগলেন।শ্রীমতী রাধার এই জন্মদিনে গন্ধ, পুস্প, ধুপ, দীপ, নৈবেদ্য ও বোসন-ভূষণ দ্বারা শ্রীমতী রাধার পূজা করে, নানাপ্রকার মহোৎসব, ক্রীড়া, কৌতুকাদি করতে হয়।রাধার সখীবৃন্দ, গোপীকাবৃন্দ, কীর্তিদা, বৃষভানু প্রভৃতিরও পুজো করা হয়।তারপর ব্রতকথা শুনে সেদিন উপবাসী থেকে পরদিন বৈষ্ণবদের সঙ্গে পারণ করতে হয়।রাধা নামের সঙ্গে কৃষ্ণ নাম যোগ করে জপ করলে যাবতীয় মন্ত্র জপের ফল লাভ হয়।তপ-জপে আমার যেমন সন্তোষ জন্মে, একবার রাধানাম উচ্চারণ করলে তার চেয়ে সহস্রগুণ বেশি আমি সন্তোষ লাভ করি।

    এই ব্রতের অনুষ্ঠানে সর্বদুঃখ দূর হয় ও পরম শান্তি লাভ হয়। ধনৈশ্চর্যে গৃহ পূর্ণ হয় এবং সর্বস্থানে বিজয়লাভ হয়।ভক্তের কাছে এই ব্রতের কথা বললে সমস্ত অমঙ্গল দূর হয়, কিন্তু ভণ্ড, পাষণ্ড ভক্তিহীন নাস্তিকের কাছে প্রকাশ করলে অমঙ্গল হয়।শ্রীকৃষ্ণের কাছে এই কথা শুনে নারদ মর্ত্যে এই ব্রত প্রচার করলেন আর নিজেও ব্রত পালন করলেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ