বৃন্দাবনের রাধাবল্লভ মন্দিরের অজানা তথ্য

 


বৃন্দাবনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম হলো রাধাবল্লভ মন্দির।হরিবংশ মহাপ্রভু এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।এই মন্দিরে শ্রীকৃষ্ণের পাশে রাধার একটি মুকুট রাখা থাকে।এই মন্দিরের বিগ্রহ স্থাপনা পুরাণেও বর্ণিত রয়েছে।এই মন্দিরের বিগ্রহের ইতিহাস কাহিনী ভগবান শিবের সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে।ভগবান শিবের পরম উপাসক ছিলেন ব্রাহ্মন আত্মদেব।ভগবান শিবের দর্শন পাওয়ার জন্য তিনি ১০০০ বছর কঠোর তপস্যা করেন।অবশেষে ওনার তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব ওনাকে দর্শন দেন এবং বর চাইতে বলেন।তখন ব্রাহ্মণ আত্মদেব মহাদেবকে বলেন আমার তপস্যায় সত্যি যদি আপনি সন্তুষ্ট হয়ে থাকেন ও আমাকে যদি বর প্রদানের যোগ্য মনে করেন এবং সত্যি যদি আপনি আমাকে বর প্রদান করতে চান তাহলে আমাকে এমন বর প্রদান করুন যা আপনার হৃদয়ে খুব প্রিয়।তখন ভগবান আনন্দিত মনে ভক্ত ব্রাহ্মণ আত্মদেবকে রাধাবল্লভের লাল বিগ্রহটি হৃদয় থেকে প্রকট করে বলেন, "এটি আমার হৃদয়ের সব থেকে প্রিয়"।এটি তুমি রাখো এবং যত্ন সহকারে সেবাযত্ন করো।ভগবান শিব তখন এই রাধাবল্লভের সেবার জন্য অনেক সোনা-দানা, মনি-মানিক্য দান করে।যে মন্ত্র উচ্চারণ করে শ্রীরাধাবল্লভ লালজীকে পুজোপাঠ করা হয় সেটিও প্রদান করেন।

    আশ্চর্যের বিষয় এই মন্ত্র উচ্চারণের সাহায্যে আজও রাধাবল্লভলালজীকে সেবা পুজো করা হয়।এই কারণে রাধাবল্লভ লালজীকে রহস্যমূর্তি বলা হয়।কারণ মহাদেবের হৃদয়ের সবথেকে প্রিয় ছিলেন।কিছুকাল পর্যন্ত ব্রাহ্মণ আত্মদেব রাধাবল্লভজীকে সেবা করতে থাকেন।তিনি সিদ্ধান্ত নেন যখন তিনি বৃদ্ধ হয়ে যাবেন তখন তিনি এই বিগ্রহের সেবার দায়িত্ব তাকেই দেবেন যে তাঁর দুই কন্যাকে বিবাহ করবেন।যোগ্য বর পাওয়ার আশায় তিনি সময়ের অপেক্ষা করতে থাকেন।অবশেষে সময় এলে শ্রীকৃষ্ণের বাঁশির অবতার হরিবংশ মহাপ্রভু ঘর ত্যাগ করে যখন বৃন্দাবনে আসেন তখন তিনি যে বনপথে আসছিলেন সেই বনেই ব্রাহ্মণ আত্মদেব রাধাবল্লভজীকে নিয়ে বাস করতেন।রাতে সেই বনে হরিবংশ মহাপ্রভু কিছু সময় বিশ্রাম নেন।তখন তিনি স্বপ্নে দেখেন রাধারানী স্বয়ং দর্শন দিয়ে বলছেন, "তুমি রাধাবল্লভ বিগ্রহ এখান থেকে নিয়ে গিয়ে বৃন্দাবনে স্থাপন করো।কিন্তু রাধাবল্লভজী তখন ব্রাহ্মণ আত্মদেবের পাশে রয়েছেন।তার শর্ত রয়েছে যে তার কন্যাগনদের বিয়ে করবে সেই কেবলমাত্র রাধাবল্লভ বিগ্রহ পাবে"।



    রাধারাণীর আদেশকে শিরোধার্য করে রাধাবল্লভ বিগ্রহ পাওয়ার আশায় ব্রাহ্মণ আত্মদেবের কুটিরে যান।অপরদিকে রাধারানী ব্রাহ্মণ আত্মদেবকে একই স্বপ্নাদেশ দেন।এইভাবে ব্রাহ্মণের দুই কন্যাকে বিবাহ করে রাধাবল্লভ লালজীকে সঙ্গে নিয়ে বৃন্দাবনে চলে আসেন হরিবংশ মহাপ্রভু।বৃন্দাবনে এসে কিছুকাল সেবাকুঞ্জে অবস্থান করেন।তাই সেবাকুঞ্জকে অনেকে রাধাবল্লভজীর পুকুর বলে মনে করেন।

    বৃন্দাবনে এসে প্রথমে মদনটের নামে(উচ্চতর) জায়গায় লতা দিয়ে বেড়া করে মন্দির তৈরী করে সেই মন্দিরে রাধাবল্লভলালজীকে স্থাপনা করেন।তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন পর্যন্ত কোনো পাকার মন্দির তৈরী করেননি।পরবর্তীকালে হরিবংশ মহাপ্রভুর বড় ছেলে যখন মন্দিরের দায়িত্ব পান তখন তিনি পুরোনো মন্দির পেছনে মন্দির ঘেঁষে নতুন মন্দির তৈরী করেন এবং সেখানে রাধাবল্লভলালজীকে স্থাপন করেন।এইভাবে রাধাবল্লভজীর প্রথম মন্দির তৈরী করা হয়েছিল।এটি প্রায় পাঁচশত বছর আগের কথা।পরবর্তীসময়ে ধাপে ধাপে বর্তমান মন্দিরটি স্থাপন করা হয়েছে।

    এই মন্দিরে ভক্তরা রাধাকৃষ্ণকে একসাথে দর্শন পেতে পারেন।এখানে রাধাকৃষ্ণ যুগলজোড়া হন।রাধাকৃষ্ণ এক।রাধার মধ্যে কৃষ্ণ ও কৃষ্ণের মধ্যে রাধা রয়েছে।দুজনে এক হয়ে একাকার হয়ে রয়েছেন।

    বিগ্রহের পাশে হরিবংশ মহাপ্রভুর শিক্ষাগুরু।তিনি সেটিকে এখানে প্রতিষ্ঠান করেছিলেন।এই শিক্ষাগুরু হলেন রাধারাণীজী।


    রাধাবল্লভজী মন্দিরের বাইরে লেখা দেখা যায় "রাধাবল্লভজী দর্শন দুর্লভ দর্শন"। কারণ প্রভু তাদেরই দর্শন দেন যাদের মধ্যে প্রভুর প্রতি শুদ্ধ ভক্তি ও অপার প্রেম বর্তমান।এইকারণে ভক্তরা এখানে এসে প্রভুর দর্শনের জন্য মন্দিরে এসে ভজন-কীর্তন করেন।ওনাকে প্রসন্ন করার জন্য পাখার বাতাস করেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ