শ্রী শ্রী সন্তোষী মাতার ব্রতকথা

 ব্রতের নিয়ম- প্রতি শুক্রবারে উপবাসে থেকে স্নান করে শুদ্ধবস্ত্র পরিধান করে সন্তোষী মাতার পূজা করতে হয়।পূজার                         সময় ধুপ-দ্বীপ জ্বালাতে হয়।এই ব্রতে কোনো তিথি নক্ষত্রের নিষেধ নেই।

ব্রতের উপকরণ- ধান, দূর্বা, ফুল, বেলপাতা, ছোলা, গুড় বা বাতাসা।দিন টক দ্রব্য খাওয়া নিষিদ্ধ।

ব্রতের ফল- যে সব নারী ভক্তিভরে এই ব্রত উৎযাপন করে সেইসব নারী বৈধব্য যন্ত্রনা পায়না ও তাদের সকল                                 মনোবাসনা পূর্ণ হয়।তারা সারাজীবন স্বামী-পুত্র ও পরিজনবর্গসহ সুখে-স্বাচ্ছন্দে কাল কাটায়। তাদের গৃহে অর্থাভাব হয়না।যেকোনো বয়সের নারী ও পুরুষ এই ব্রত করতে পারে।

ব্রতকথা-  এক বণিক বাস করিত কোন এক গ্রামে।সাতপুত্র ও পত্নী রাখি গেলো স্বর্গধামে।।ছয় ভাই কর্ম করে আনন্দিত                 হয়ে।অর্থ যাহা পায় তাহা আনি দেয় মায়ে।।ছোটছেলে রামুর ছিল বেকার জীবন।করিতে না পারে কিছু অর্থ উপার্জন।।সাবিত্রী নামেতে ছিল রামুর রমণী।সতী সাধ্বী পতিব্রতা স্বামী সোহাগিনী।।বিবিধ সুখাদ্য মাতা কোরিয়া রন্ধন।আগে দিত ছয় পুত্রে করিতে ভোজন।।ভাইদের উচ্ছিষ্ট রামুকে খেতে দেয়।বধূদের উচ্ছিষ্ট লয়ে সাবিত্রীকে দেয়।।একদা সাবিত্রী তার স্বামীর গোচরে।সব কথা জানাইলো ব্যাথিত অন্তরে।।পরীক্ষা করিয়া রামু জানিতে পারিল।সব সত্য কথা যাহা সাবিত্রী কহিলো।।বুঝিতে পারিল রামু অর্থ নাহি যার।এ সংসারে জন্ম বিফল হয় তার।।বিদেশে যাইবো রামু সাবিত্রীরে বলে।শুনিয়া সাবিত্রী তাহা ভাসে আঁখিজলে।।দেশে দেশে ঘুরে রামু এক দেশে এলো।ধোনি সদাগর সঙ্গে তার দেখা হলো।।রামুকে সে সদাগর চাকুরী যে দিলো।রামুর বুদ্ধিতে ব্যবসা প্রচুর বাড়িলো।।ব্যাবসায় অংশীদার রামুকে করিল।ক্রমশঃ উন্নতি তার হইতে লাগিল।।প্রত্যেক মাসেতে রামু সাবিত্রীর নামেতে।পাঠাতে লাগিল টাকা আপন বাড়ীতে।।সেই টাকা সাবিত্রী কখনো নাহি পেত।ছয় ভাই সেই টাকা গোপনে লইত।।ছয় জায়ের কথামতো সাবিত্রী খাটিত।তবু সে পেট ভোরে খেতে নাহি পেত।শাশুড়ির অত্যাচার নাহি আর সয়।কাষ্ঠলাগি রোজ তারে বনে যেতে হয়।একদিন নিদ্রা তার আসে আচম্বিতে।জ্যোতির্ময়ী দেবী এক দেখিলো স্বপ্নেতে।।বলে আমি মা সন্তোষী পূজা কর মোরে।তার ফলে দুঃখ-কষ্ট সব যাবে দূরে।।পতি ফিরে পাবে বলি অন্তর্ধান কৈল।স্বপ্নভঙ্গে সাবিত্রী যে উঠিয়া বসিল।।মন্দির দেখিয়া সাবিত্রী সেই স্থানে যায়।দেখে স্বপ্নে দেখা দেবী বিরাজে তথায়।।ব্রতবিধি জানিয়া সাবিত্রী ব্রত করে।সন্তোষী মা প্রসন্না হলেন তার পরে।।হেথা স্বপ্নাদেশ দেবী করেন রামুরে।শীঘ্র করি ওরে রামু ফিরে যাও ঘরে।।দেবীর আদেশে রামু দোকানেতে গেলো।সেইদিন লাভ তৎ দশগুন হল।।বহু অর্থ লয়ে রামু ফিরে আসে ঘরে।ভক্তিভরে প্রণাম সে করিল মাতারে।।পত্নীরে দেখিয়া রামু হইলো বিস্মিত।পত্নীমুখে সব শুনি হইলো দুঃখিত।।রামু ও সাবিত্রী পূজে সন্তোষী মাতারে।ধনৈশ্চর্য তাহাদের দিনে দিনে বাড়ে।।ব্যবসা করিয়া রামু উন্নতি করিল।যথাকালে তাহাদের এক পুত্রসন্তান হলো।।ছয় ভাই ছয় জায় মন্ত্রণা করিল।রামুকে বিপদে ফেলিবার চেষ্টা করিল।।সন্তোষী মাতার কৃপা ছিল তার পরে।সে কারণে ক্ষতি কেহ করিতে না পারে।।সন্তোষী মাতার ব্রত করে যেইজন।ধনে পুত্রে লক্ষ্মীলাভ করে সেইজন।।টক দ্রব্য শুক্রবারে কভু না খাইবে।সন্তোষী মাতার কৃপা অবশ্য পাইবে।।সন্তোষী মাতার ব্রতকথা হইলো সমাপন।উলুধ্বনি দাও সবে যত বামাগণ।।জয় জয় সন্তোষী মাতা তুমি গো কল্যাণী।তোমার কৃপায় সব সুখী হয় জানি।।

            -------অথ শ্রী শ্রী সন্তোষী মাতার ব্রতকথা সমাপ্ত------

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ