রাখীবন্ধনের গুরুত্ব

    


 হিন্ধু ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ উৎসবগুলির মধ্যে অন্যতম এই উৎসব।এইদিন ভাইয়ের মঙ্গলকামনা করে তার হাতে রাখী বেঁধে দেন বোনেরা।ভাই-বোনের পবিত্র সম্পর্ককে আরো জোরালো করতে প্রাচীনকাল থেকে এই উৎসব ধুমধামের সাথে পালিত হয়।

    প্রতিটি রাজ্যে রাখীবন্ধনের নিয়ম ভিন্ন।মহারাষ্ট্রে এইদিন জল দেবতা বরুন দেবের পূজা করা হয়।কথিত আছে পবিত্র নদীতে স্নান করে সূর্যদেবের পূজা করলে সমস্ত পাপের বিনাশ ঘটে।

    ইংরেজি অগাস্ট মাসের পূর্ণিমাতে রাখীবন্ধন উৎসব পালিত হয়।পুরান মতে রাবনের বোনেরা তিথি না মেনে রাখী পড়িয়েছিলেন তাই রামচন্দ্রের সঙ্গে যুদ্ধে তার পরাজয় ঘটে।

   রাখীপূর্ণিমার দিন থালায় প্রদীপ, হলুদ, সরষে, কুমকুম আর রাখী নিয়ে কুমকুমের ফোঁটা ভাইয়ের কপালে দিয়ে রাখী বাঁধতে হয়।রাখী বাঁধা হয়ে গেলে প্রদীপ ঘুরিয়ে ভাইয়ের আরতি করতে হয়।ভাই যদি বয়সে বড় হয় তাহলে তার থেকে আশীর্বাদ নিতে হয়।তারপর ভাইকে মিষ্টিমুখ করতে হয়।

    রাখীবন্ধন উৎসবের সঙ্গে বেশ কিছু পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক কাহিনীর বর্ণনা রয়েছে।সেগুলি হলো:-

  • বামন অবতার কথা:- স্বর্গে তখন অসুররাজ বলির রাজত্ব।অসুরদের দাপটে ভীত দেবরাজ ইন্দ্র ভগবান বিষ্ণুর শরণ নেন।বিষ্ণু বামন অবতার রূপে রাজা বলির কাছে তিন পা জমি ভিক্ষা করে।রাজা বলি সম্মত হলে বামন অবতার দুই পায়ে স্বর্গ ও মর্ত্য অধিকার করে নেন।তৃতীয় পা রাখার জন্য তখন বলি নিজের মস্তক এগিয়ে দেন।এইভাবে বলিকে দমন করলে স্বর্গে শান্তি ফিরে আসে।বলির এই দনে খুশি হয়ে এরপর বিষ্ণু তাকে বর দিতে চাইলে অসুররাজ বিষ্ণুকে পাতালে বসবাস করতে অনুরোধ করেন।এতে বাধ্য হয়ে বিষ্ণুকে পাতালে যেতে হয়।তখন বিষ্ণুপ্রিয়া লক্ষ্মী দরিদ্র স্ত্রী সেজে বলির হাতে রাখী বেঁধে দেন এবং বিষ্ণুকে স্বর্গে ফিরিয়ে আনার প্রার্থনা করেন।বোনের কাছে করা প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে বলি রাজি হন এবং বিষ্ণু স্বর্গে ফিরে আসেন।
  • দ্রৌপদী-কৃষ্ণ কথা:- মহাভারতে কথিত আছে কৃষ্ণ যখন তার সুদর্শন চক্র দিয়ে শিশুপালকে বধ করেছিলেন তখন তার তর্জনীতে আঘাত লেগে রক্তপাত হয়েছিল।সেইসময় দ্রৌপদী তার নিজের শাড়ির পার ছিঁড়ে প্রিয় সখার আঙুলে বেঁধে দিয়েছিলেন।এই ঘটনাটি শ্রাবন মাসের পূর্ণিমাতে হওয়ায় এটিকেও রাখীবন্ধন হিসেবে মনে করা হয়।
  • আলেকজান্ডার ও পুরুর কথা:- ইতিহাসে আলেকজান্ডার ও পুরুর শত্রুতার কথা সবাই জানে।এই শত্রুতার রাশ টানতেই আলেকজান্ডার পত্নী পুরুকে ভাই সম্বোধন করে রাখী পরিয়েছিলেন এবং প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিয়েছিলেন, যাতে যুদ্ধক্ষেত্রে মুখোমুখি হলেও আলেকজান্ডারকে পুরু প্রাণে না মারেন।বোনকে দেওয়া এই প্রতিজ্ঞা পালন করেছিলেন পুরুরাজ।যুদ্ধে আলেকজান্ডারকে পরাজিত করলেও প্রাণে মারেননি।
  • বঙ্গভঙ্গ ও রবীন্দ্রনাথ :- ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করতে রাখীকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।বঙ্গভঙ্গকে আইনকে রোধ করতে জাতি-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ আন্দোলনে সামিল হন।সেইদিন ঠিক হয় প্রত্যেক মানুষ প্রত্যেক মানুষের হাতে হলুদ সুতো বেঁধে দেবে।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই দিন রাখীবন্ধন উৎসবের ডাক দেন।হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানোর জন্য তিনি এই উদ্যোগ নেন।রাখীবন্ধনের সম্প্রীতি সেইদিন যেভাবে জায়গা করে নিয়েছিল তা আজকের দিনেও ততটাই প্রাসঙ্গিক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ