বিষ্ণুর মৎস অবতার ধারণের কারণ

 


ভগবান বিষ্ণু হলেন সৃষ্টির পালনকর্তা।তার শয্যা অনন্ত।স্ত্রী লক্ষ্মী, ধাম বৈকুন্ঠ, বাহন গরুড়।তাঁর একহাতে পঞ্চজন্য শঙ্খ, অপর হাতে সুদর্শন চক্র, এক হাতে কৌনদকি গদা, অন্য হাতে পদ্ম।তিনি জগৎপালন, লোকরক্ষা এবং অধর্মের বিনাশ করে ধর্মের স্থাপনা করতে বারবার আবির্ভুত হয়েছেন নানা রূপে।তিনি যে সব রূপে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছেন সেইসব রূপ গুলিকে বলা হয় তার অবতার।বেদ, ভাগবৎ, পুরাণে বিষ্ণুর ১০ অবতারের কথা বলা রয়েছে।সেই ১০ অবতার ঘিরে যেসব কাহিনী রয়েছে পূরাণের পাতায় তার মধ্যেও অন্যতম হলো বিষ্ণুর মৎস অবতারের কাহিনী।

    বিষ্ণুর প্রথম অবতার হলো মৎস অবতার।এই অবতারে বিষ্ণুদেব প্রকট হয়েছিলেন সত্যযুগে।মৎসোপুরাণ মতে মহাপ্রলয়ের সময় জীবকূলকে রক্ষা করার জন্য ভগবান বিষ্ণু মৎস অবতার ধারণ করে পৃথিবীতে আবির্ভুত হয়েছিলেন।

    পুরাকালে ছিলেন দ্রাবিড়দের এক প্রতাপশালী রাজা।তার নাম ছিল সত্যব্রত।সত্যব্রত ভগবান বিষ্ণুর উপাসক।একদিন রাজা সত্যব্রত নদীতে হাত ধুইতে গিয়েছিলেন ঠিক তখনি তার হাতে এসে পড়লো একটি ছোট মাছ।সেই মাছটি বললো রাজা আমায় একটু আশ্রয় দেবে? তুমি যদি আজ আমায় রক্ষা করো তাহলে ভবিষ্যতে আমি তোমায় রক্ষা করবো।রাজা অবাক হয়ে বললেন তুমি আমায় রক্ষা করবে কি থেকে? মাছটি বললো ভবিষ্যতে একটি বিরাট প্রলয় হবে।সব ডুবে যাবে।আমি তোমায় তখন রক্ষা করবো।রাজা বললেন ঠিক আছে।রাজা তখন এই ছোট্ট মাছটিকে রক্ষা করলেন।তাকে একটি ছোট্ট পাত্রে জল দিয়ে রেখে দিলেন।কিন্তু দেখা গেলো দিনে দিনে মাছটা বোরো হয়ে যাচ্ছে।মনু তখন তাকে পুকুরে ছেড়ে দিলেন।কয়েকদিন পর সে আরো বড় হয়ে পড়লো।তখন তাকে পুকুর থেকে তুলে গঙ্গায় ছেড়ে দেওয়া হলো।গঙ্গায় কয়েকদিন থাকার পর সে এতো বড় হয়ে গেলো যে গঙ্গাতেও তার জায়গা হলো না।তখন তাকে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেওয়া হলো সমুদ্রে।সেই সময় সে সত্যব্রতকে বললো, রাজা প্রলয়কাল আগত এবার সমগ্র পৃথিবী জলে ডুবে যাবে আর কিছুই থাকবে না।এখন আপনি একটা বড় নৌকা তৈরী করুন।তাতে একটি শক্ত দড়ি বাঁধুন।সেই নৌকায় আপনি সপ্তঋষিদের সঙ্গে নিয়ে উঠুন।আপনার সঙ্গে সবধরণের শস্যদানা, চতুর্বেদ, বাসুকিনাগ ও জীবদের রাখুন।নৌকা প্রলয়ে সমুদ্রে ভাসবে।আপনি আমার জন্য অপেক্ষা করবেন।আমি শৃঙ্গযুক্ত হয়ে আপনার কাছে আসবো আর আপনাকে এই মহাপ্রলয় থেকে উদ্ধার করবো।মৎসর কথা শুনে রাজা এক বিরাট নৌকা তৈরী করলেন।তাতে সব ধরণের জীবজন্তু, শস্যদানা, বেদ, বাসুকিনাগের সাথে সপ্তঋষিদের নিয়ে নৌকায় উঠে গেলেন।এরপর এলো প্রলয়।বিরাট বিরাট ঢেউ এসে ভাসিয়ে নিয়ে গেলো গোটা পৃথিবী।কোথাও কিচ্ছু রইলো না।চিরদিকে শুধুই জলরাশি।পাহাড় সমান ঢেউয়ে ঢুকতে লাগলো নৌকা।এমন সময় সেই মৎস শৃঙ্গযুক্ত হয়ে এলো সেই নৌকার কাছে।তার শৃঙ্গের সঙ্গে বাঁধা হলো নৌকা।সে টানতে টানতে নৌকাটিকে নিয়ে গিয়ে বেঁধে দিলো মলয় পর্বতের একটি চূড়ার সঙ্গে যেটি ডুবে যায়নি।এরপর সেই মৎস মনু রাজা ও সপ্ত ঋষিদের সামনে বিষ্ণুরূপ ধারণ করে এবং তাদের জানায় সে মনু রাজা সপ্তঋষি ও জীবজগৎকে এই প্রলয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য মৎস রূপে ধরাধামে অবতীর্ন হয়েছিলেন।এখন আর কোনো ভয় নেই।এই কথা বলে তিনি অদৃশ্য হয়ে যান।


    এরপর জল কমে গেলে প্রজা সৃষ্টির জন্য রাজা কঠোর তপস্যা শুরু করেন।নৌকায় থাকা শস্য ও প্রাণীদের বঙ্গবিস্তার ঘটিয়ে শুরু করলেন এক নতুন সভ্যতা।জন্ম হলো মানব জাতীর।ইতিহাসে এটি আর্যসভ্যতা নাম পরিচিত।রাজা সত্যব্রত পরিচিত হলেন আর্যপিতা ভগবান মনু রূপে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ