বাগবাজারের সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ি

   

কালী শব্দটির মানে আমরা বুঝি কাল হিসেবে।ভুত-ভবিষৎ-বর্তমান এই নিয়েই আমরা জানি মহাকাল অর্থাৎ কালী।
ভাগীরথীর তীরে অতীতের কুমোরটুলি অঞ্চল ছিল ঘন জঙ্গলে ঘেরা।আশেপাশে গড়ে ওঠেনি জনবসতি।কালিবর তপস্বী হিমালয়ে তপস্যা করছিলেন। মা তাকে আদেশ দেন "তোমাকে দক্ষিণে যেতে হবে।দক্ষিণে সতীর অঙ্গ পড়েছে।সেখানে সতীর অঙ্গ উদ্ধার করে নিত্য পুজোর ব্যবস্থা করো"।তারপর তিনি গঙ্গার পাড ধরে হাঁটা শুরু করেন।ঠিক এই জায়গায় আসার পর তিনি দেখেন একটি বেদি এবং তার ওপর কিছু ফুলমালা ও হাড়গোড় পড়ে আছে।আসলে জায়গাটি ছিল ডাকাতদের ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে মায়ের পুজো ও বলি দেওয়ার জন্য।এইস্থানটিকেই তিনি সতীর অঙ্গের স্থান মনে করে সেখানে ধ্যান করতে বসেন।মা সিদ্ধেশ্বরী রূপে দেখা দেন।উনি সিদ্ধ হন।এরপর থেকেই মা এখানে সিদ্ধেশ্বরী রূপে বিরাজমান।গঙ্গাতীরে হোগলা পাতার ছাওনির নিচে তিনি মূর্তি তৈরী করে পুজো করতেন।তারপরে মা তাকে বলেন আরো দক্ষিণে গিয়ে সতীর সেই অঙ্গ উদ্ধার করতে।
     শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব এই মন্দিরে এসেছিলেন।শোনা যায় নটসম্রাট গিরিশচন্দ্র ঘোষ এই মন্দিরের দেবীকে "উত্তর কলকাতার গিন্নি" বলতেন ।
    এই দেবীকে মূলত ডাকাতরা পুজো করতেন।মায়ের সামনে যে ঘট রয়েছে তার নিচে কি আছে তা আজও রহস্যময়।দীপাবলির দিন আজও তন্ত্র মতে দেবীর পুজো হয়।পুরোহিত আদা, চানাচুর ও কারণ খেয়ে পুজোয় বসেন।এই স্থানে এলে মানুষের মনে শান্তি আসে ও তাদের মনোস্কামনা পূর্ণ হয়।স্থানমাহাত্ম্যের কারণে পুণ্যার্থীরা বলে থাকেন এটি একটি জাগ্রত দেবী মন্দির।
    জনশ্রুতি ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির আমলেও সন্যাসী কালিবর প্রতিষ্ঠিত দেবী কালিকার সামনে দেওয়া হতো নরবলি।আজও এই মন্দিরে পশুবলি হয়।কার্তিক অমাবস্যার কালীপুজো ছাড়াও বুদ্ধপূর্ণিমায় ফুলদোল ও জ্যৈষ্ঠ মাসের ফলহারিণী কালীপুজো এখানকার বড়ো উৎসব 
    রাজা নবকৃষ্ণদেবের নির্দেশে সেকাল থেকে একাল শোভাবাজার থেকে সবজি আসে ভোগের জন্য।কালীপুজোর ভোগে থাকে খিচুড়ি, ভাজা, সাদা ভাত, ডাল নানা ধরণের তরকারি, ডালনা, মাছ, চাটনি, পায়েস, ইত্যাদি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ