ভগবান বিষ্ণুর বুদ্ধ অবতারের কাহিনী

 

ভগবান বিষ্ণুর নবম অবতার বুদ্ধ অবতার।ইনি আবির্ভুত হয়েছিলেন কলিযুগে।
    বুদ্ধদেবের জন্ম হয় কপিলাবস্তু নগরে।তিনি ছিলেন সাক্ক্যদের রাজা শুদ্ধতনের পুত্র।তাঁর মায়ের নাম ছিল মায়াদেবী।একবার মায়াদেবী স্বপ্নে দেখলেন যে রুপোর মতো সাদা এক শ্বেত হস্তী, যার শুঁড়ে সাদা পদ্মফুল সে তার গর্ভে প্রবেশ করলো।গণকিরা রানীর এই কথা শুনে বললেন রানীর এবার সন্তান হবে।বেশ কয়েকমাস পরে রানী মায়াদেবী রাজাকে বললেন, "আমি বাপের বাড়ি যাবো"
    রাজা বললেন ঠিক আছে যাও।তোমার যেটা ভালো লাগবে সেটা করো।বাপের বাড়ি থেকে ফেরার পথে পড়লো লুম্বিনী উদ্যান।মায়াদেবীর সেই উদ্যানে যাওয়ার খুব শখ হলো।সেই উদ্যানে কোথাও সুন্দর বড় বড় গাছ ফুলে ফুলে ভরা।শান্ত পদ্ম ফোটা সরোবর।মায়াদেবী ওই বাগানের এক শাল গাছে হাত দিয়ে দাঁড়ালেন।ওই দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই জন্ম হলো বুদ্ধদেবের।তখন সারা আকাশ জুড়ে উঠেছিল বৈশাখী পূর্ণিমার চাঁদ।কিন্রু বুদ্ধদেবের জন্মের সাতদিন পরেই মারা গেলেন মায়াদেবী।শুদ্ধতন বিষাদ সাগরে ডুবে গেলেন।কিন্তু ছোট্ট ছেলের দিকে তাকিয়ে তিনি সেই শোক কাটিয়ে উঠতে পারলেন।বুদ্ধের নামকরণ উপলক্ষ্যে ৮ জন দৈবজ্ঞ রাজবাড়িতে এসেছিলেন।তাঁদের মধ্যে সাতজন বললেন এই শিশুর দেহে দুর্লভ সব লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।যদি ও গৃহে থাকে তাহলে রাজচক্রবর্তী হবে আর যদি সন্ন্যাস নেয় ত্রিলোকপাল বুদ্ধ হবে।দৈবজ্ঞদের মধ্যে বয়সে সবচেয়ে ছোট যিনি বললেন, এই ছেলে কিছুতেই গৃহে থাকবে না।যেদিন এ জরাগ্রস্থ বৃদ্ধ, রোগগ্রস্থ মানুষ, মৃতদেহ এবং হাসিমুখ ভিক্ষুক দেখবে সেদিন ও গৃহত্যাগ করবে।
    সিদ্ধার্থ বড় হলো রাজা শুদ্ধতন সিদ্ধার্থর জন্য আলাদা প্রাসাদ তৈরী করলো।সেখানে শুধু নারীদের প্রবেশের অধিকার রইলো।রাজা শুদ্ধতন তার মন্ত্রী ও রাজপ্রাসাদের লোকজনদের বললেন দেখো সিদ্ধার্থ যেন প্রাসাদের বাইরে কিছুতেই না যেতে পারে।তাকে বিলাসে ঘিরে রাখো।সে যেন বুঝতে না পারে দুঃখ কাকে বলে, মৃত্যু কাকে বলে।রাজা শুদ্ধতন সিদ্ধার্থর সাথে বিয়ে দিলেন যশোধরার।তাদের একটি ছেলেও হলো।বুদ্ধ তার নাম দিলেন রাহুল।রাজা শুদ্ধতন ভাবলেন এইবারে বুঝি ছেলেটি সংসারী হলো।কিন্তু ততক্ষনে সিদ্ধার্থ একদিন তার রাজপ্রাসাদের বাইরে তার সারথি চন্নার সাথে ভ্রমণ করতে গিয়ে দেখে ফেললেন একজন বৃদ্ধ, একজন রোগগ্রস্থ মানুষকে একটি মৃতদেহকে এবং একজন সন্ন্যাসী ভিক্ষুকে।
    সিদ্ধার্থর কাছে এই জগৎ সংসার অসার বলে মনে হলো।একদিন গভীর রাতে তার নিদ্রিত স্ত্রী যশোধরা ও ছেলে রাহুল কে রেখে বেরিয়ে পড়লেন সিদ্ধার্থ।তখন তার ওসি মাত্র ২৯ বছর।এরপর শুরু হলো তার কঠিন সাধনা।প্রায় ৭ বছর ধরে নিরলস সাধনার পর তিনি বোধি লাভ করলেন।তিনি হলেন বুদ্ধ।এরপর থেকে তিনি সারাজীবন ধরে নগরে, জনপদে, গ্রামে-গ্রামে এ দিলেন তার বাণী।এই যুদ্ধু বিদ্ধস্থ ভারতে এমনকি এই পৃথিবীতে প্রথমবার তিনিই বললেন অহিংসার কথা।বুদ্ধ বললেন হিংসা নয়, ক্রোধ নয়, যুদ্ধ নয় চাই অহিংসা, করুনা আর উদারতা, চাই সহনশীলতা, চাই সহানুভূতি।তিনি বললেন পশুবলি বন্ধ হোক প্রাণীহত্যা বন্ধ হোক।তৈরী হলো মঠ, তৈরী হলো সংঘ।সারাজীবন অক্লান্ত পরিশ্রম করে তিনি তার অহিংসার বাণী ছড়িয়ে দিলেন ভূ-ভারতে।জন্ম হলো বৌদ্ধ ধর্মের।৮০ বছর বয়সে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং নির্বাণ লাভ করলেন।বুদ্ধ চলে গেলেন।কিন্তু এই ভারতে আজও তার বাণী, তার জীবন আমাদের কাছে এক বিস্ময় রয়ে গেছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ