কাশীপুর বামনদাস কালীবাড়ির ইতিহাস

    

বামনদাস মুখোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত বিশাল কালী মন্দির কলকাতার কাশীপুর অঞ্চলে অবস্থিত।কাশীপুর উদ্দ্যানবাটী থেকে মাত্র ৫-৭ মিনিটের পায়ে হাঁটা দূরত্ব।মা এখানে কৃপাময়ী নামে পরিচিত।
    বামনদাস ছিলেন বাংলার একজন নাম করা ব্যবসায়ী।তিনি ছিলেন কনৌজের বিখ্যাত কবি শ্রী হর্ষের বংশধর।নদীয়া জেলার ফুলিয়াতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।৭ বছর বয়সে বাবার মৃত্যুর পর উনি মাকে নিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতে শুরু করেন।৭ বছর পর সেখানে মনমালিন্যের কারণে ওনারা জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত দা বাড়িতে আশ্রয় নেন।পরে ঐপরিবারের এক বিধবা বামনদাসকে দত্তক নেন।পড়াশোনার পরিবর্তে ব্যবসায় মন দেন বামনদাস।কয়লা ও ইঁটভাটার ব্যবসা করতেন বামনদাস।এর মাধ্যমে তিনি প্রভূত সম্পত্তির মালিক হন এবং ১৮৮৯ সালে কলকাতার প্রথম সারির উচ্চবৃত্তদের মধ্যে নিজের জায়গা করে নেন। ১৮৯৪ সালে জনহার্ট নামের একজন ইংরেজের থেকে কাশীপুরের ৩৫ বিঘা বাগান বাড়ি ক্রয় করেন তিনি।এই জমিতে বাগান, পুকুর, সিংহফটোক বাড়ি ছাড়াও দুই বিঘা জমির ওপর সুবিশাল নবরত্ন কালীমন্দির তৈরী করেন।১৯০৪ সালে এই কালী মন্দির নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়।এখানে কৃপাময়ী কালীমূর্তি সহ দুৰ্গেশ্বর ও ক্ষেত্রেশ্বর শিবলিঙ্গদ্বয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।মন্দির রক্ষনাবেক্ষনের জন্য কলকাতা, বর্ধমান, হুগলী ও যশোর জেলার কিছু সম্পত্তি দেবতার নামে অর্পণ করা হয় এবং ১৯০৯ সালে একটি ট্রাস্ট গঠন করা হয়।
    এটি একটি নবরত্ন মন্দির।বামনদাস নিজের ভাঁটার ইঁট দিয়ে এই মন্দির নির্মাণ করেন।ইংল্যান্ডের বার্মিহাম থেকে আনা ঢালাই লোহার স্তম্ভ এখানে ব্যবহার করা হয়েছে।এছাড়াও ইতালির মার্বেল ও বার্মার (বর্তমান নাম মায়ানমার) সেগুন কাঠের ব্যবহারও এখানে দেখা যায়। 


     জনশ্রুতি কাশীপুরের বামনদাস কালীবাড়ির সঙ্গে জুড়ে রয়েছে রঘু ডাকাতের নাম।উত্তর কলকাতায় তখন রঘু ডাকাতের খুব যাতায়াত ছিল।রঘু ডাকাত এখানে মায়ের পুজো করতেন।তারপরে তিনি বেরোতেন।তখন থেকে এই মন্দিরের ওপর নাম রঘু ডাকাতের কালীবাড়ি।
    প্রাচীন এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু বিপ্লবীর নাম।তাদের আস্তানা ছিল এই মন্দির।মদনমোহন মালব্য, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, বিধানচন্দ্র রায় সহ অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীরা গোপনে দেখা করতেন এই মন্দিরে।১৯৩৯ সালে সুভাষচন্দ্র বোস কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এখানে ওনাকে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়।
    বামনদাস মুখোপাধ্যায় কয়লার ব্যবসায়ী ছিলেন।কয়লার ব্যবসায় দেশে প্রচুর খ্যাতি ছিল ওনার।সেইকারণে তিনি একটি খেতাব পেয়েছিলেন "coal king"।তিনি স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন কালী মন্দির তৈরী কালী ঠাকুর প্রতিষ্ঠা করার।তার জন্য কোথায় কি পাওয়া যাবে তাও তিনি স্বপ্নাদেশে জানতে পারেন।
    কৃপাময়ী এই কালী বাড়িতে কোনোদিন বলি প্রথা ছিল না।প্রথা মেনে মা-কে নিরামিষ ভোগ দেওয়া হতো।এখনো একই ভাবে পুজো চলে আসছে।
    লোকশ্রুতি, মা রাতে এখানে মন্দিরের চূড়াতে বসে থাকেন।ছোট শিশু কন্যার রূপে মা মন্দিরের চূড়া থেকে পা দোলাতে থাকেন।মধ্যরাতে কাজ থেকে বাড়ি ফেরার সময় বহু মানুষ নাকি তা প্রত্যক্ষ করেছেন।এটি একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা যা শুনলে মানুষের মনে শিহরণ জাগে।
    কিন্তু এখন আর বড়ো করে নয় তুলনামূলক ভাবে কমেছে পুজোর জাঁকজমক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ