ভগবান বিষ্ণুর পরশুরাম অবতারের কারণ

 


ভগবান বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম অবতার।এই অবতার আবির্ভুত হয়েছিল ত্রেতাযুগে।ত্রেতাযুগে যখন এই পৃথিবীতে ক্ষত্রিয়দের দাপট বেড়ে যায় তখন আবির্ভুত হন পরশুরাম। ক্ষত্রিয়দের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন তিনি।পরশুরামের পিতা ছিলেন মুণি জমদুগ্নী ও মাতা রেণুকা।একবার জমদুগ্নির পুত্ররা নিজেদের আশ্রম ছেড়ে অন্য জায়গায় ভ্রমণ করতে গেছে।এমনি সময় রাজা কার্তবীর্যাচন গভীর অরণ্যে স্বসৈন্যে মৃগয়া করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে জমদুগ্নির আশ্রমে উপস্থিত হয়।জমদুগ্নি তার কামধেনু সুরভীর সাহায্যে রাজা কার্তবীর্যরচন এবং তার সৈন্যদের আহারের ব্যবস্থা করলেন।কামধেনুর এই ক্ষমতা দেখে রাজা জমদুগ্নির কাছে তার কামধেনু সুরভীকে চেয়ে বসলেন।কিন্তু জমদুগ্নি তাকে দিতে অস্বীকার করেন।তিনি রাজাকে বললেন, "এই কামধেনু আমি কাওকে দিতে পারবো না"।

    কার্তবীর্যাচন বললেন, "তুমি তো ব্রাহ্মণ।তোমার এতো লোভ কিসের ?" 

জমদুগ্নি উত্তরে বললেন, "এটা লোভের কথা নয়।কামধেনু এই আশ্রমে লালিত-পালিত হয়েছে।ও আমাদের জীবন যাত্রার অঙ্গ।একে আমি দিতে পারবো না"



    কার্তবীর্যাচন বললেন, "আমি রাজা, ক্ষত্রিয়, আমার ক্ষমতা অপরিসীম।যদি তুমি আমায় এই কামধেনু না দাও তাহলে আমি বলপূর্বক একে নিয়ে যাবো"

সুরভীকে নিয়ে তাদের মধ্যে বাদানুবাদ চলে এবং অবশেষে কার্তবীর্যাচন জমদুগ্নির কামধেনু সুরভীকে জোর করে নিয়ে যায় ও জমদুগ্নির আশ্রম তছনছ করে দেয়।এরপর ফিরে আসেন জমদুগ্নির পাঁচ পুত্র।চার পুত্র আশ্রমের এই অবস্থা দেখে মূর্ছমান হয়ে পড়েন।কিন্তু পঞ্চম এবং কনিষ্ঠ পুত্র পরশুরাম ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন।

    তিনি জমদুগ্নিকে প্রশ্ন করলেন, "পিতা এইকাজ কে করলো ? কার এতো সাহস ? কে আমাদের এই আশ্রম নষ্ট করলো ?"

জমদুগ্নি বললেন রাজা কার্তবীর্যাচন অনেক সৈন্যসামন্ত নিয়ে এসেছিলো।ওরা জোর করে সুরভীকে নিয়ে গেছে আর আমাদেরই দশা করে গেছে।

তখন পরশুরাম ঠিক করলেন তিনি রাজা কার্তবীর্যচনের ওপর প্রতিশোধ নেবেন।কার্তবীর্যাচনের সাথে তুমুল যুদ্ধ করেন পরশুরাম এবং তাকে পরাজিত করে বধ করেন।কিন্তু এরফলে পরশুরামের অবর্তমানে কার্তবীর্যাচনের পুত্ররা আশ্রমে এসে পরশুরামের পিতা জমদুগ্নিকে হত্যা করে।পরশুরাম এই ঘটনা দেখে প্রতিজ্ঞা করেন এদের বিনাশ করে তিনি ক্ষত্রিয় জাতিকে ধ্বংস করবেন।তিনি এক লড়াই করেন কার্তবীর্যাচনের পুত্রদের সঙ্গে এবং তাদের বধ করে পিতৃ হত্যার প্রতিশোধ নেন।এরপর তিনি একুশ বার পৃথিবীকে নিঃক্ষত্রিয় করেন।শেষে তার পিতামহ ঋচীকের অনুরোধে ক্ষত্রিয় হত্যা বন্ধ করেন।তিনি ক্ষত্রিয় হত্যা জনিত পাপ থেকে মুক্ত হতে পাঁচটি হ্রদে পুজো করেন।ওই পাঁচটি হ্রদ সমন্তপঞ্চক তীর্থে পরিণত হয়।পরবর্তীকালে ওই ধর্মস্থানটি কুরু রাজ্যে অবস্থিত হওয়ার ফলে ওই তীর্থের নাম হয় কুরুক্ষেত্র।পরশুরাম ছিলেন অস্ত্রজ্ঞ।তাঁর কাছে অস্ত্র শিক্ষা করেছিলেন ভীষ্ম ও দ্রোণাচার্য ও পরবর্তীকালে কর্ণ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ