কলকাতার ফিরিঙ্গি কালীবাড়ির অজানা কিছু কথা

    


 প্রায় ৫০০ বছির পুরোনো এক কালী মন্দির। বিপিনবিহারী গাঙ্গুলী স্ট্রিটের সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে এন্টোনি কবিয়ালের নাম। ঊনিশ শতকে পর্তুগিজ বংশভূত কবিয়াল এন্টোনি হেন্সম্যান এই দেবস্থানে এসে বুঝেছিলেন আসলে খ্রীষ্ট আর কৃষ্ণ অভিন্ন। 

    ভালোবেসে বাংলা ভাষার আঙিনায় ঢুকে ভিনদেশি কবি দেবী কালিকার উপাসক হয়ে গিয়েছিলেন। এন্টোনি কবিয়াল ফিরিঙ্গি থাকেননি।

    এন্টোনি সাহেবের মামার বাড়ি ছিল মন্দিরের পাশের বাড়ি। মন্দিরের পাশে যে রাস্তাটি রয়েছে সেটি তখন খাঁড়ি ছিল।সেন্ট্রাল জায়গাটি ছিল গঙ্গা।গঙ্গার গা ধরে এই খাঁড়িটি গিয়েছিলো বেলেঘাটা অঞ্চলে।

    মন্দিরের প্রতিষ্ঠাকাল নিয়েও গবেষকদের মধ্যে রয়েছে মতান্তর। শ্রীমন্ত পন্ডিত নামের এক ব্রাহ্মণ এই মন্দিরের দায়িত্ব পেয়েছিলেলন আবার অনেকে বলেন প্রথমে এখানে ছিল একটি শিব মন্দির।পরে শ্ৰীমন্ত পন্ডিত এখানে কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন।এই মন্দিরটি ছিল শিবের মন্দির।যার জন্য শিব ও  গম্বুজ একদম সমান সমান আছে।
    সেই সময় শ্রীমন্ত পন্ডিত নাকি বসন্ত রোগে চিকিৎসা করতেন।অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান-ফিরিঙ্গি অধ্যুষিত বউবাজার অঞ্চলে তিনি বহু মানুষকে চিকিৎসা করে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছিলেন। কৃতজ্ঞতা স্বরূপ বহু ফিরিঙ্গি শ্রীমন্ত পন্ডিতের মন্দিরে পুজো দিতে আসতো।সেই কারণেই লোকমুখে ছড়িয়ে পরে ফিরিঙ্গি কালী নামটি।
    এন্টোনি সাহেব এই মন্দিরে আসতেন এবং মায়ের পুজোও করতেন, মায়ের আরাধনা করতেন।এমন সময় তিনি এক হিন্দু বিধবা মহিলাকে বিবাহ করেন।ঔরারি অঞ্চলের সৌদামিনী দেবীকে তিনি বিবাহ করেছিলেন।পরবর্তীকালেও এন্টোনি সাহেব মামার বাড়ি এলে মন্দিরে আসতেন ও মায়ের নামগান করতেন।এন্টোনি সাহেব ওনার স্ত্রীর কারণেই সবচেয়ে বেশি হিন্দু দেবদেবীর প্রতি আকৃষ্ট হন।
    তিনি এখানে শিবের মূর্তির পাশেই একটি পঞ্চমুন্ডির আসন প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেই পঞ্চমুন্ডীর আসনেই তিনি মায়ের মূর্তির প্রতিষ্ঠা করেন।তার পর থেকেই এখানে মায়ের পুজো শুরু হয়।



    শোনা যায় মন্দিরের পুরুনো মূর্তিটি ছিল মাটির।১৯৪৬ সালের দাঙ্গার ফলে পুরোনো মূর্তিটি ধ্বংস হয়ে যায়।পরে ১৯৮৭ সালে কংক্রিটের মূর্তিটি তৈরী করা হয়।মধ্য কলকাতার এই কালী মন্দির ঊনিশ শতক থেকেই জনপ্রিয়। 
    দিনটি ছিল ১৯৯১ সালের ২২শে আগস্ট, বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছিলো। পরেরদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার যখন মন্দিরের সেবায়েতরা মন্দিরে আসেন তখন দেখা যায় মন্দিরের তালা ভাঙা ও মায়ের সমস্ত গয়না চুরি হয়ে গিয়েছিলো।লালবাজার থানায় ডায়েরি করেছিলেন মন্দিরের পুরোহিত ও সেবায়েতরা। ঠিক সেই সময় একজন ভদ্র মহিলা, গায়ের রং প্রায় কালো লাল পাড় শাড়ী পরিহিতা তিনি মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ না করে গেটের বাইরে থেকে বলছেন, এখানে চুরি হয়ে গেছে, সমস্ত গয়না লাল বাজারে চলে গেছে, পুলিশ পেয়ে গেছে সব চোর ধরা পরে গেছে।
    প্রথমে মন্দিরের কেউ সেই কথায় গুরুত্ব দেয়নি।তার ঠিক ৪০-৪৫ মিনিট পরেই লালবাজার থানা থেকে খবর আসে তিনি যে কথা গুলি বলে গিয়েছিলেন তা পুরোপুরি মিলে যায়।
    সিদ্ধেশ্বরী প্রতিমার পাশেই অষ্টধাতুর দূর্গা।জগদ্ধাত্রীর মূর্তি ও নারায়ণ শিলা।একসময় পশুবলি হলেও এখন আর তা হয় না।কালীপুজোয় আজও বহু ভক্ত সমাগম হয় এখানে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ