কুমারী পূজা


দূর্গা পূজায় কুমারী পূজা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ পূজা।দূর্গা পূজার নবমী তিথিতে এই পুজো হয়।অপার রহস্যময় এই আরাধনা। মহাশক্তির সুনির্দিষ্ট এক অনিন্দিতা রুপময়ী আকৃতির নাম কুমারী। কুমারী শক্তি সৃষ্টির মূল বেদি। কুমারী পূজা মহাশক্তির সমস্ত সৃষ্টি ক্ষমতা আর মাধূর্য মহিমা অনুভব করার আর এক নাম। দেবীর কুমারী নামটি বহু প্রাচীন।তৈত্বীরিও আরন্যকে প্রথম দেবীকে কুমারী ব্রম্ভচারীনি বলে সম্বোধন করা হয়েছে।
মহাভারতের বিরাট পর্বে ও ভীষ্ম পর্বে দেবীকে কুমারী বলেই উল্লেখ করা হয়েছে।ঋক বেদের দেবী শ্লোকে কুমারী ঋষি কন্যার মাধ্যমে জগৎ সৃষ্টির কথা উল্লেখ রয়েছে। সেই কুমারী শক্তি বিশ্ব প্রশবিনী। সেই কুমারী মাতাই আদি পিতা সৃষ্টি কর্তাকে প্রশব করেন। কিন্তু তাঁর জন্ম দেন কে? স্হান‌ই বা কোথায়? সে যে জলধীর অগাধে, সেখানেই সেই শক্তির যোনির উৎস। একথা বলেছেন তিনি স্বয়ং নিজেই।এই কারণেই কুমারী পূজার মহিমা অপরিসীম।
ব্রম্ভবরীবর্ত পূরাণ মতানুসারে, বিশ্বের সমস্ত নারী দেবী প্রকৃতি শক্তির অংশরুপা। যিনি কুমারী কন্যাকে বসন, ভূষণ ও চন্দন দিয়ে পূজা করেন, তিনি আসলে প্রকৃতির‌ই পূজা করেন। মহাভারতের ভীষ্ম পর্বে অর্জুন দেবী কুমারীর পূজা করেছিলেন। দেবী পূরাণ মতে, দেবী পূজার পর উপযুক্ত উপাচারে কুমারীকে ভোজন করিয়ে তৃপ্ত করতে হবে।তন্ত্রসার গ্রন্থে বলা হয়েছে, কুমারীকে ভোজন করালে ত্রিলোককে ভোজন করানো হয়। বৃহৎ ধর্মীয় পূরাণে শিশু কন্যাকে পূজা করার এক সুক্ষ্ম নিদর্শন লক্ষ্য করা যায়।সেখানে বলা হয়েছে, রাম কর্তৃক রাবন বধের জন্য দেবতারা ব্রম্ভার কাছে যঞ্জ করার অনুমতি চাইলে ব্রম্ভা দেবীকে জাগরিত করার কথা উল্লেখ করেন।তখন দেবতারা আদ্যা শক্তির স্তব করলেন, সেই স্তবে সন্তুষ্ট হয়ে এক কুমারী দেবী আবির্ভূত হয়ে দেবীর বোধন করে পূজা করতে নির্দেশ দিলেন।সেই নির্দেশ মতো ব্রম্ভা দেবতাদের সাথে পৃথিবীতে এসে ঘুরতে ঘুরতে এক নির্জন স্থানে বেল গাছের একটি পাতায় গৌর বর্ন এক শিশু কন্যাকে নিদ্রিতা দেখে তাকে বিশ্ব প্রশবিনী জগৎ জননী মহামায়া বলে স্তব করেছিলেন।ব্রম্ভার সেই স্তবে শিশু কন্যাটি জাগরিত হয়ে দেবী রুপে আবির্ভূতা হয়েছিলেন এবং দেবতাদের অভিষ্ট পূরণ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
আমাদের আরাধ্যা মৃন্ময়ী নয়, সে হল চীন্ময়ী আরাধনা। রমনীর মাঝে জননীর দর্শন। এক প্রকৃতির মাঝে বিশ্ব প্রকৃতির অবলহন।সহজ সরল ভাষায় বোঝাতে এই কুমারী পূজার নির্দেশ। মহামায়ার মহাপূজায় তাই কুমারী পূজার গুরুত্ব অপরিসীম। কুমারী পূজায় ফলের কথা বলে শেষ করা যায় না। যোগিনী তন্ত্র গ্রন্থে শিব পার্বতীকে বলেছেন, এই পূজার ফলে ত্রিলোক জয় করা যায়। শাস্ত্র মতানুসারে দশ বছর বয়সী কুমারীকে পূজা করার উল্লেখ রয়েছে। তন্ত্র সাস্ত্রে অবশ্য এক থেকে ষোল বছর বয়সী কুমারীকে পূজা করার কথা বলা হয়েছে। আবার দেবী ভগবতানুসারে বলা হয়েছে,এক বছর বয়সী কুমারী পূজার যঞ্জ নয়।বয়স অনুসারে কুমারীর নামকরণ এবং সেই কুমারীকে পূজা করলে কি ফল মেলে তা বলা হয়েছে সনাতন শাস্ত্রে।দুই বছর বয়সী কন্যার নাম ‘সরস্বতী‘, এই কুমারী পূজা করলে দুঃখ, দারিদ্র্য ও শত্রু নাশ হয়। ধনসম্পদ ও আয়ূ বৃদ্ধি ঘটে।তিন‌ বছর বয়সী কন্যার নাম ‘ত্রিধামূর্তি‘, এই কুমারীর পূজা করলে আয়ূ বৃদ্ধি ও বংশ বৃদ্ধি হয়।চার বছর বয়সী কন্যার নাম ‘কালীকা‘, এই কুমারীকে পূজা করলে বিদ্যার্থী, বিজয়ার্থী ও রাজ্যার্থী হ‌ওয়া য়ায়। পাঁচ বছর বয়সী কন্যার নাম ‘সুভগা‘, এই কুমারীর পূজা করলে রোগ নাশ হয়।ছয় বছর বয়সী কন্যার নাম ‘উমা‘, এই কুমারীর পূজা করলে শত্রু নাশ হয়।সাত বছর বয়সী কন্যার নাম ‘মালীনি‘, এই কুমারীর পূজা করলে ধনসম্পদ ও ঐশ্বর্য্য লাভ হয়।আট বছর বয়সী কন্যার নাম ‘কুব্জীকা‘, এই কুমারীর পূজা করলে শত্রুদের মোহিত করা যায়।নয় বছর কন্যার নাম ‘কালসন্ধর্বা‘, এই কুমারীর পূজা করলে অহিতদারিদ্র ও শত্রু বিনষ্ট হয়।দশ বছর বয়সী কন্যার নাম ‘অপরাজিতা‘, এই কুমারীর পূজা করলে সকল অভিষ্ট সিদ্ধ হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ