ভগবান ভেঙ্কটেশ্বর বালাজির কাহিনী


 ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের চিত্তর জেলায় অবস্থিত ভগবান বালাজির মন্দির।ভারতের সবচেয়ে ধনি মন্দির।কিন্তু এখানে পূজিত তিরুপতি বালাজি খুবই গরিব এবং খুবই ঋণী।সবচেয়ে ধনি মন্দির কিন্তু ভগবান এতো গরিব কেন? এর পেছনে রয়েছে এক পৌরাণিক কাহিনী।


    পুরাকালে নারদমুনি একবার গঙ্গা নদীর তটে উপস্থিত হয়েছিলেন।যেখানে অনেকজন ঋষি একসাথে ছিলেন।তাঁরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না যে তাদের তপস্যার ফল তাঁরা কোন ভগবানকে উৎসর্গ করবেন।তিন মুখ্য ভগবান ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের মধ্যে বিভ্রান্ত ছিলেন।তখন নারদমুনি ঋষি ভৃগুকে তিনজন ভগবানকে পরীক্ষা করার উপদেশ দেন।ঋষি ভৃগুও প্রত্যেক ভগবানের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

    সর্বপ্রথম তিনি প্রজাপতি ব্রহ্মার কাছে গেলেন।সেই সময় ব্রহ্মাদেব বীণার সুরে বিলীন ছিলেন।এই কারণে তিনি ঋষি ভৃগুর আগমন বুঝতেই পারেননি।এতে ঋষি ভৃগু ক্রোধিত হয়ে ব্রহ্মাদেবকে অভিশাপ দেন যে কোনো মন্দিরে তার পুজো হবে না।

   এরপর তিনি কৈলাশ পর্বতে যান।সেখানে মহাদেব ও মাতা পার্বতী একান্তে কথোপকথন করছিলেন।ঋষির এইভাবে আকস্মিক আসাতে মহাদেব শিব ক্রুদ্ধ হয়ে যান।তিনি ঋষি ভৃগুর অপমান করতে থাকেন।এখানেও তিনি ভগবান শিবকে অভিশাপ দেন যে বিশ্বে তাঁকে শুধুমাত্র লিঙ্গ রূপেই পুজো করা হবে।

    শেষে তিনি ভগবান বিষ্ণুর কাছে গেলেন।কিন্তু তিনিও ঋষি ভৃগুকে দেখতে পেলেন না।যার জন্য ঋষি ভৃগু আরো বেশি ক্রোধিত হয়ে যান।তিনি রাগে বিষ্ণুদেবের বুকে পা দিয়ে আঘাত করেন।ক্রোধিত হওয়ার জায়গায় ভগবান বিষ্ণু ঋষির পদসেবা করেন এবং ঋষিকে প্রশ্ন করেন তার এই কঠোর বুকে পা দিয়ে আঘাত করে তেনার কোথাও লাগেনি তো।একথা শুনে ঋষি ভৃগুর ক্রোধ কিছুটা কমে যায়।তিনি নিশ্চিত করেন যজ্ঞের ফল সর্বদা ভগবান বিষ্ণুকেই অর্পণ করবেন।

    কিন্তু ভগবানের বুকে পদাঘাত করায় মাতা লক্ষ্মী খুবই ক্রোধিত হয়ে যান।তিনি চেয়েছিলেন ভগবান যেন ঋষি ভৃগুকে দণ্ড দেন।কিন্তু তা না হওয়ায় তিনি বৈকুন্ঠ ছেড়ে চলে যান এবং তপস্যা করার জন্য পৃথিবীতে আসেন।এই ঘটনায় প্রভাবিত হয়ে ভগবান বিষ্ণু বৈকুন্ঠে খুবই দুঃখী হয়ে যান।একদিন তিনি মাতা লক্ষ্মীর খোঁজ করার জন্য বৈকুন্ঠ ছেড়ে বিভিন্ন জঙ্গল ও পাহাড়ে ঘুরতে থাকেন।কিন্তু তিনি মাতা লক্ষ্মীর দর্শন কোথাও পেলেন না।তখন বিষ্ণুদেব একটি  পিঁপড়ের ঢিবির মধ্যে আশ্রয় নেন।ইটা দেখে ভগবান ব্রহ্মা ও মহাদেব শিব ভগবান বিষ্ণুর সহায়তা করার সিদ্ধান্ত নেন।তাই তাঁরা গাভী ও বাছুরের ছদ্মবেশ ধারণ করেন এবং মাতা লক্ষ্মীর কাছে যান।তাঁরা ভগবান বিষ্ণুর সমস্ত মা-কে বলেন যে কিভাবে ভগবান সমস্ত আহার বন্ধ করে দিয়ে পিঁপড়ের ঢিবির মধ্যে আশ্রয় নিয়ে আছেন।ভগবান বিষ্ণুকে সহায়তা করার জন্য তাঁরা মাতা লক্ষ্মীকে ওই গাভী ও বাছুরকে রাজা যাদব নরেশকে দেওয়ার মিনতী করেন।মাতা লক্ষ্মী তখন একজন গোয়ালিনীর বেশে ওই গাভী ও বাছুরকে রাজা যাদব নরেশকে দিয়ে আসেন।রাজা বাকি গাভীদের সাথে ছদ্মবেশী ভগবানদেরও ভেঙ্কটাধর পর্বতে নিয়ে যেতেন।গাভী রুপী ব্রহ্মা প্রতিদিন ওই পিঁপড়ের ঢিবিতে দুধ ঢালতে থাকেন এবং ভগবান বিষ্ণুকে খাওয়াতে থাকেন।একদিন গরুচারক সেই দৃশ্য দেখতে পান।সে ক্রোধে গাভীকে মারা জন্য হাতে থাকা কুঠার ছুড়ে দেয়।কিন্তু তা বাইরে বেরিয়ে আস্তে থাকা ভগবান বিষ্ণুকে লাগে।তখন বিষ্ণুদেব ক্রোধে ওই কুঠার আবার ওই গরুচারকের দিকে ছুড়ে দেয়।যার ফলে গরুচারকের তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হয়।ভগবান বিষ্ণু রাজা যাদব নরেশকেও তার সেবক দ্বারা কৃতকর্মের জন্য দানবরূপে জন্মানোর অভিশাপ দেন।রাজা নির্দোষ হওয়ায় ভগবানের কাছে দয়া চান।তখন ভগবান বিষ্ণু তাকে বললেন, "আমি আমার পরবর্তী জন্মে শ্রীনিবাস রূপে আর তুমি আকাশরাজ রূপে জন্ম গ্রহণ করবে।যখন বিষ্ণুর সাথে পদ্মাবতীর বিবাহের দরুন আকাশরাজের থেকে মুকুট উপহার হবে সেইদিন এই অভিশাপ সমাপ্ত হবে"।

    সময়ের চক্র ঘুরতে থাকে।ভগবান বিষ্ণু শ্রীনিবাস রূপে জন্মগ্রহণ করলেন ও ভেঙ্কটাধর পর্বতে থাকতে লাগলেন।ওনার মাতা ছিলেন বকুল দেবী।তিনি শ্রীনিবাসের দেখাশোনা করতেন।অন্যদিকে আকাশরাজেরও জন্ম হয়ে গিয়েছিলো।কিন্তু আকাশরাজের কোনো সন্তান ছিল না।একদিন ক্ষেতে যাওয়ার সময় ঊনি সোনার বাক্সের মধ্যে পদ্মের ওপর শুয়ে থাকা এক কন্যা সন্তান লাভ করলেন।তিনি ওই কন্যা সন্তানের নাম পদ্মাবতী রাখেন।একদিন শ্রীনিবাস শিকারে গিয়েছিলো আর একটি হাতিকে ধরার চেষ্টা করছিলো।কিন্তু হাতি একটি বড়ো ঝোপের মধ্যে ঢুকে পড়ে।সেই স্থানে পদ্মাবতী তার সঙ্গীদের সাথে খেলছিল।হাতি তাদের সবাইকে তাড়া করে।তখন শ্রীনিবাস তাদের সবাইকে রক্ষা করে।কিন্তু শ্রীনিবাস পদ্মাবতীর সুন্দর রূপে মুগ্ধ হয়ে যায়।বাড়ি এসে শ্রীনিবাস মা বকুলদেবীকে সব কথা বলে এবং পদ্মাবতীকে বিবাহ করার কথা বলে।

     জানা যায় তিনি ভগবান শ্রী নারায়ণ আর বকুলদেবী পূর্বজন্মে ছিলেন মা যশোদা।বকুলদেবী বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে আকাশরাজের কাছে গেলেন।রাস্তায় আসতে আসতে বকুলদেবীও জানতে পারলেন পদ্মাবতীও শ্রীনিবাসকেই বিবাহ করতে চান।যখন আকাশরাজ এই বিষয়ে জানতে পারলেন তখন তিনি ঋষি বরাহঃপতির থেকে পরামর্শ নেন।বরাহঃপতি জানান পদ্মাবতীর জন্ম এইজন্যে ভগবান বিষ্ণুর সাথে হওয়ার জন্যই হয়েছে।শ্রীনিবাসই ভগবান বিষ্ণু।একথা জানতে পেরে সবাই খুশি হয় ও বিবাহ ঠিক করা হয়।শ্রীনিবাস সবচেয়ে সুন্দর বিবাহের আয়োজন করার জন্য কুবের দেবের কাছ থেকে ঋণ নেন।এই ঋণ এতো বেশি ছিল ভগবান শ্রীনিবাসের(বালাজী) সমস্ত ভক্ত দ্বারা শোধ করা হয়।মনে করা হয় যে কলিযুগ শেষ হলেই এই ঋণ পরিশোধ হয়ে যাবে।

    মাতা লক্ষ্মী যখন বিষ্ণুদেবের পুনর্বিবাহের কথা জানতে পারেন তখন তিনি ভগবান বিষ্ণুর সামনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।পদ্মাবতী ও মহালক্ষ্মীকে একসাথে যখন শ্রীনিবাসের সামনে আসেন তখন তিনি নিজেকে একটি মূর্তিতে পরিবর্তিত হয়ে যান।তখন মহাদেব ও ব্ৰহ্মদেব এসে তাঁদের বলেন কলিযুগে মানুষের কল্যাণের ও মুক্তির জন্য ভগবান বিষ্ণু এই লীলা করেছেন।এই কথা জানার পর মাতা লক্ষ্মী ও পদ্মাবতী ভগবান বালাজির সাথে ঐস্থানেই থাকার নির্ণয় নেন।মাতা লক্ষ্মী বালাজির বামদিকে ও পদ্মাবতী ডানদিকে অবস্থান করেন।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ