ভগবান বিষ্ণুর নৃসিংহ অবতার ধারণের কারণ

 


ভগবান বিষ্ণুর চতুর্থ অবতার হলো নৃসিংহ অবতার।এই অবতার আবির্ভুত হয়েছিল সত্যযুগে।হিরণ্যাক্ষের মৃত্যুর খবর পৌঁছলো দৈত্যদের রাজা হিরণ্যকশিপুর কাছে।সে ক্রোধে অন্ধ হয়ে গেলো।সে জানতে পারলো হিরণ্যাক্ষের মৃত্যুর জন্য দায়ী ভগবান বিষ্ণু।সে সিদ্ধান্ত নিলো সে হারণ্যাক্ষের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবে।সে বিষ্ণুকে ধ্বংস করে দেবে।তাই সে প্রজাপতি ব্রহ্মার উদ্দেশ্যে কঠোর তপস্যায় বসলো।তার তপস্যায় কেঁপে উঠলো স্বর্গ।দেবতারা শঙ্কিত হয়ে উঠলেন।ব্রহ্মা এসে তাকে বললেন- "তোমার তপস্যায় আমি তুষ্ট হয়েছি।কি বর চাও বলো ?"

    হিরণ্যকশিপু বললেন- "আমি অমরত্ত্ব চাই"।ব্রহ্মা উত্তরে বলেন- "তা হয় না।এতে সৃষ্টির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে।তুমি অন্য কোন বর চাও"।তাহলে আপনি আমায় এমন কোনো বর দিন যাতে আপনার সৃষ্টি করা কোনো মানুষ বা প্রাণী আমায় হত্যা করতে না পারে এবং আমায় যেন কেউ দিন অথবা রাতে যেন মারতে না পারে।আমায় যেন কেউ স্বর্গ বা পৃথিবীতে মারতে না পারে।আমায় যেন কেউ কোনো অস্ত্রের আঘাতে মারতে না পারে।আমাকে যেন কেউ আমার বাড়ির অন্দরে বা বাহিরে যেন হত্যা করতে না পারে।প্রজাপতি ব্রহ্মা তথাস্তু বলে সেখান থেকে চলে যান।

    ব্রহ্মদেবের কাছে বরলাভ করার পর হিরণ্যকশিপু সমস্ত পৃথিবী জয় করলো এবং এক সময় দেবতাদেরও দেবলোক থেকে বিতাড়িত করলো।হিরণ্যকশিপুর ছিল চার পুত্র।তার মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিল প্রহ্লাদ।সে ছিল বিষ্ণুদেবের একনিষ্ঠ ভক্ত।সেকথা জানতে পেরে বিষ্ণু বিদ্বেষী হিরণ্যকশিপু ক্রুদ্ধ হন।তিনি আদেশ দেন প্রহ্লাদকে যেন হত্যা করা হয়।ওর বেঁচে থেকে লাভ নেই।ও নিজের বংশের শত্রু।

    হিরণ্যকশিপুর আদেশে দৈত্যরা বড় বড় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলো প্রহ্লাদকে।কিন্তু তও প্রহ্লাদের কিছুই হলো না।হিরণ্য কশিপু প্রহ্লাদকে বললো- "ওরে মূর্খ শত্রুপক্ষের স্তব করা বন্ধ কর।এখনো সময় আছে প্রাণ বেঁচে যাবে"।প্রহ্লাদ এই কথা শুনে হিরণ্যকশিপুকে বললো- "পিতা যাকে স্মরণ করলে জন্ম জবা ও শত্রু প্রভৃতির ভয় দূর হয় সেই ভয় দূরকারী অনন্ত বিষ্ণু আমার হৃদয়ে থাকায় আমার ভয় কোথায়"।

    এই কথা শুনে হিরণ্যকশিপু বিষাক্ত সাপেদের আদেশে দিলেন তারা যেন প্রহ্লাদকে দংশন করে।এই শুনে বিষধর সাপেরা এসে প্রহ্লাদকে দংশন করলো।কিন্তু তাতেও প্রহ্লাদের কিছুই হলো না।তখন হিরণ্যকশিপু মত্ত হাতিদের আদেশ দিলেন যাও প্রহ্লাদকে হত্যা করো।হাতিরা এসে প্রহ্লাদকে আঘাত করলো।তাকে পায়ের নিচে পিষে ফেলার চেষ্টা করলো।কিন্তু তাতেও কিছু হলো না।তখন তিনি ঠিক করেন প্রহ্লাদের খাবারে তীব্র বিষ মেশাতে হবে।পাচকরাও নির্দেশমতো তাই করলো।কিন্তু বিষ্ণুনাম নিয়ে প্রহ্লাদ সেই বিষ হজম করে ফেলে।পাচকরা সেই দেখে ভয় পেয়ে হিরণ্যকশিপুকে বললো দৈত্যরাজ আমরা অতি ভিষণ তীব্র বিষ দিয়েছিলাম।কিন্তু আপনার পুত্র প্রহ্লাদ সেই বিষ হজম করে ফেলেছে।এই কথা শুনে আরো রেগে যান।তিনি নির্দেশ দেন প্রহ্লাদকে দড়ি দিয়ে বেঁধে সমুদ্রের জলে যেন ফেলে দিয়ে আসা হয়।কিন্তু তাতেও কিছু হলো না।প্রহ্লাদ সেই বন্ধন ছিন্ন করে জলের ওপর উঠে এলো।

    সবশেষে কোনো উপায় দেখতে না পেয়ে হিরণ্যকশিপু তার বোন হোলিকা কে প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনে প্রবেশ করার আদেশ দেন।হোলিকার ওপর দৈব আশীর্বাদ ছিল।অগ্নি কখনোই তাকে স্পর্শ করতে পারবে না।কিন্তু প্রহ্লাদকে নিয়ে অগ্নিকুন্ডে প্রবেশ করা মাত্র হোলিকা পুড়ে চাই হয়ে যায়।কিন্তু ভগবান বিষ্ণুর কৃপায় প্রহ্লাদ অক্ষত ছিল।


    এইসব দেখে আশ্চর্য্য হয়ে গেলেন হিরণ্যকশিপু।তিনি প্রহ্লাদকে জিজ্ঞাসা করলেন- "এই যে আমি তোমায় এতবার হত্যা করার চেষ্টা করছি তোমায় রক্ষা করছে কে ?" প্রহ্লাদ উত্তর দিলো- "শ্রীহরি"।এতে ক্ষুব্ধ হয়ে হিরণ্যকশিপু বললেন খালি শ্রীহরি শ্রীহরি বলছো।কোথায় তোমার শ্রীহরি ? 

    প্রহ্লাদ বললো তিনি সব জায়গায় বিরাজ করছে।ক্ষুব্ধ হিরণ্যকশিপু পাহাড়ের থাম দেখিয়ে বললেন এই থামের ভেতরেও কি তোমার শ্রীহরি আছেন? প্রহ্লাদ উত্তরে বললো হ্যাঁ আছেন।তখন হিরণ্যকশিপু ওই থামে গিয়ে পদাঘাত করলেন।ঠিক সেই সময় থামের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো নৃসিংহ মূর্তি।বিষ্ণুদেবের চতুর্থ অবতার।

    তিনি ব্রহ্মার সৃষ্টি নন।তিনি কিছুটা মানুষ কিছুটা সিংহ।তিনি এসে তুলে নিলেন হিরণ্যকশিপুকে।তারপর তাকে নিজের জঙ্ঘার উপর রেখে গোধূলীর সময় নিজের নখের দ্বারা হিরণ্যকশিপুকে বধ করলেন।হিরণ্যকশিপুর পর তার পুত্র প্রহ্লাদ হলো রাজা।শান্তি ফিরে এলো সমগ্র পৃথিবীতে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ