দান্তেওয়ারার দন্তেশ্বরী মাতার মন্দির

 


    আসমুদ্র হিমাচল ভারততীর্থের দুর্গম পাহাড়, অরণ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এক একটি সতীপীঠ।যুগ যুগ ধরে দেবী দর্শনে এসেছে কত সাধক ও পরিব্রাজকেরা।ছত্তিশগড়ের দান্তেওয়ারায় দেবীর দাঁত পড়েছিল।দেবী এখানে স্বয়ং দন্তেশ্বরী।

    দেবী দন্তেশ্বরীর মন্দির কোষ্ঠিপাথর খোদাই করে তৈরী হয়েছে দেবীর শিলামূর্তি।আদিবাসী অধ্যুষিত বাস্তার বাসীর কাছে এই দেবী আদ্যাশক্তি বিপদহারিণী।ভক্তদের বিশ্বাস মাকে মন দিয়ে ডাকলেই বিপদ কাটবে।সপ্তদশ শতকে রাজা আনামযী সিংহ বাহাদুর তৈরী করেন এই মন্দির।

    বছরভর উৎসবময় বাস্তারের আদিবাসী জনজীবন।ফসল তোলার উৎসব, রথযাত্রা,মাটি উৎসব, বনদেবীর উৎসব।তবে সমস্ত উৎসবকে ছাপিয়ে রয়েছে বাস্তার দশেরা।দেশের সর্বত্র পালিত দশেরা উৎসব থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।বাস্তার দশেরা শুরু থেকে শেষ একজনই মাতা দন্তেশ্বরী।

    ৫১ সতীপীঠের অন্যতম এই দান্তেওয়ারার দন্তেশ্বরী মাতার মন্দির।পীঠ নির্ণয় তন্ত্র মতে এখানেই পড়েছিল সতীর দাঁত।তাই মায়ের নাম দন্তেশ্বরী।আর পাঁচটি পুজোর থেকে দন্তেশ্বরী মায়ের পুজোর রীতিনীতি একটু আলাদা।বাস্তারের দশেরা উৎসব অন্যতম দর্শনীয় উৎসব।১০দিন ধরে চলে এই উৎসব।শেষদিন মাতা দন্তেশ্বরীর ধ্বজা নিয়ে পথ পরিক্রমা করে ভক্তরা।Gun fire এ চলে দেবী মায়ের বন্দনা।আকাশ জুড়ে চলে আতশবাজির প্রদর্শনী।


    দন্তেশ্বরী দেবীর মন্দির জুড়ে রয়েছে নানা স্থাপত্যশৈলী।পুরাতাত্বিকদের অনুমান মন্দিরের বয়সকাল প্রায় ৮০০ বছর।দন্তেশ্বরী ও ভুবনেশ্বরী দুই বোন পাশাপাশি থাকেন এক মন্দিরে।শুধু বাস্তা বা ছত্তিশগড় নয় সমগ্র ভারত থেকে ভক্তরা মায়ের কাছে আসেন।মায়ের কাছে সমস্ত মনোবাসনা পূর্ণ হয়।


    দন্তেশ্বরী মন্দিরের সামনেই চোখে পরে এক সুউচ্চ স্তম্ভ।যাকে পেছনে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করেন মন্দিরে আগত ভক্তরা।এটি গরুড় দেবের স্তম্ভ।এই স্তম্ভের ওপর গরুড় দেবের মূর্তি রয়েছে।পেছনে হাত দিয়ে স্তম্ভটিকে জড়িয়ে ধরতে পারলে তার মনোস্কামনা পূর্ণ হয়।


    বাস্তার খুবই মনোরম জায়গা।প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর।রুক্ষ মাটির বুকে সবুজের সমারোহ।বেড়ানোর জন্য এককথায় অসাধারণ।চোখ ভোরে উপভোগ করা যায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য।এখানেই রয়েছে চিত্রকূট জলপ্রপাত।পাথুরে জমির বুক ভেঙে আছড়ে পড়ছে সুতীব্র জলরাশি।পাথর জলের এমন সোহাগ সত্যই বিরল।এই জলরাশি দেখতে দেখতে বিভোর হয়ে পড়েন পর্যটকরা।জলের শব্দ ভেঙে দিচ্ছে প্রকৃতির গাম্ভীর্য।চিত্রকূটের জলই বাস্তারের অর্থনীতির অবলম্বন।বাস্তারের আদিবাসী জনজীবনের সাহারা বলতে দুজন।এক হলো মা দন্তেশ্বরী আর হলো এই চিত্রকূট জলপ্রপাত।আদিবাসী জীবনের আনন্দ, অর্থনীতি, সমাজজীবন, সুখে থাকা, বেঁচে থাকা বলতে এই ভারতের নায়াগ্রা "চিত্রকূট"।


    এইখানে মন্দিরকে দুইদিক থেকে জড়িয়ে রেখেছে দুই নদী, শঙ্খিনী ও ডঙ্কিনী।গাঢ় লাল বর্ণের শঙ্খিনী ও ডঙ্কিনী।এই দুই নদীর সঙ্গম দন্তেশ্বরী মাতার মন্দিরকে দুইদিক থেকে ঘিরে রেখেছে।সঙ্গমের এক প্রান্তে রয়েছে যেমন মাতার মন্দির অন্যপ্রান্তে রয়েছে দেবীর চরণ চিহ্ন আর তার সঙ্গে রয়েছে পীঠ ভৈরবের মন্দির।


    মূল মন্দির থেকে ৩০০ কিমি দূরে রয়েছে ভৈরব মন্দির।মায়ের কালোরূপের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে অনন্ত রূপের সন্ধান।মাতৃনামেই পাপ মুক্তি।মায়ের সংসার রুপি দোলনাতে বড় হচ্ছে তার সন্তানেরা।সংসারে যেমন মা থাকেন তেমনি বাবার ভূমিকাও কম নয়।তীর্থভূমেই মেলে সেই অনন্ত শক্তির প্রকাশ।মা দন্তেশ্বরীকে শক্তিরূপে পূজো করেন ভক্তরা।মায়ের পাশেই থাকেন ভৈরব।মা দন্তেশ্বরীর মন্দির থেকে কিছুটা দূরেই রয়েছে কাল ভৈরবের মন্দির।

   গ্রামবাসীরা এনাকে বনভৈরব নামেই ডাকেন।কারণ তিনি বনে অধিষ্ঠান করছেন।দন্তেশ্বরী মন্দির থেকে শঙ্কিনী ও ডঙ্কিনী যদি পেরিয়ে এখানে আসতে হয়।

    প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর বাস্তার।প্রকৃতিকে আরো রঙিন করে তুলেছে আদিবাসী সম্প্রদায়ের রঙিন উৎসব।ধামসামাদল সিনার শব্দে কেঁপে ওঠে গহন জঙ্গল।পাহাড় জঙ্গল মালভূমি এই মাটি ওপর মাহাত্ম নিয়ে সোডা জাগ্রত দেবী দন্তেশ্বরী।পুণ্যভূমিতে পা রাখলেই জেগে ওঠে ভক্তিভাব।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ