সাঁইবাবার ব্রতকথা


শুনো শুনো ভক্তবৃন্দ শুনো সর্বজন।

সাঁইবাবার ব্রতকথা কৰিব বর্ণন।।

প্রথমে প্রণাম করি লক্ষ্মীনারায়ণে।

জগতের সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা চতুরাননে।।

প্রণমামি মহেশ্বর দৈবকী নন্দন।

প্রণমামি তেত্রিশকোটি যত দেবগণ।।

প্রণাম করি শ্রীরামচন্দ্রে ভক্তহনুমানে।

রইলো প্রণাম শতসহস্র যত ভক্তজনে।।

প্রণমামি মহামায়া গণেশ জননী।

যাঁর মায়ায় এ ভুবন চলছে দিবাযামী।।

বন্দনা করি এবে লক্ষ্মী সরস্বতী।

সিদ্ধি দাতায় প্রণাম করি হয়ে হৃষ্টমতি।।

গুরুদেবের বন্দনা করি ধরিয়া চরণ।

যাঁহার কৃপায় পাই ইষ্ট দর্শন।।

গুরুব্রহ্মা গুরুবিষ্ণু গুরু মহেশ্বর।

গুরুর দয়াতে পাই জগৎ ঈশ্বর।।

এইবার সাঁইবাবা সাধুরে চরণ।

পুজিয়া তাহার কথা করিব বর্ণন।।

ধরাভূমি বাধা বিঘ্নে যখন যায় ভরে।

অত্যাচারে মানুষ থাকে দুঃখিত অন্তরে।।

সেইকালে অবতারের হয় আগমন।

সাঁইবাবা সেইরূপ মোদের প্রিয়জন।।

ঈশ্বরের অংশে তিনি লভিয়া জনম।

অসহায় মানবেরে করেন রক্ষণ।।

১৮৩৮ সনে পাথের গ্রামের ঘরে।

জন্ম নিলেন সাঁইবাবা ব্রাহ্মণ পরিবারে।।

মা-বাবার খবর পুস্তকে নাই লেখা।

মুসলমান সন্ত তাকে করেছিল রক্ষা।।

পরম স্নেহযত্নে তিনি শিক্ষা দীক্ষা দিয়ে।

১৬ বছর ছিল তাঁকে বুকে ধরে নিয়ে।।

তারপর একদিন ত্যাজিয়া সেই স্থান।

গুরুর আদেশে সাঁই শিরডিতে যান।।

আমেদাবাদের শিরডি সর্বজন বিদিত।

তথাকার মসজিদে হইলেন স্থিত।।

সুনী মসজিদ নামে বিখ্যাত সেই স্থানে।

দ্বারকামাই নাম তার হল কালক্রমে।।

সেইখানে থাকি সদা বিভূতি দেখাইয়া।

অগণিত মানুষেরে সাঁই আনিত টানিয়া।।

জল দিয়া প্রদীপ জ্বালি শুন্য হাতে আনি।

রসগোল্লা খাদ্যদ্রব্য সব নাম না জানি।।

তারপর বলতো শত জ্ঞানগর্ভ কথা।

অলৌকিক কার্যেতে মুগ্ধ হতো যত শ্রোতা।।

শুভ্র বস্ত্র পরতেন সদা কাঁধে ঝোলা।

হাতে নিতেন শুধু একটি টিনের থালা।।

থাকত লোটা টিমটা আর ছিন্ন কম্বল।

মসজিদে থাকতেন পড়ে এই ছিল সম্বল।।

ভিক্ষা করি চাল আনি অন্ন রন্ধন করি।

পশুপক্ষীকে দিয়ে তবে খেতেন পেট ভরি।।

কখনো আশ্রিতদের কিছু অন্ন দিয়ে।

অর্ধ পেট ভোজনেও থাকতেন তৃপ্ত হয়ে।।

কত রকম দিতেন ঔষধ নানারোগের তরে।

আনন্দের বইতো উজান বন্ধ্যা নারীর ঘরে।।

সন্তানহীনা পেলো সন্তান রোগী পেলো মুক্তি।

তিনিই হলেন সাঁইবাবা এমনই তাঁর শক্তি।।

কত দরিদ্রের দুঃখ লাঘব করেছেন সাঁই।

ব্যবসায়ীর মুখে হাসি, তার তুলনা নাই।।

ত্যাগ-বৈরাগ্য শ্রদ্ধা ভক্তি তার জীবনের বাণী।

কালের নিয়মে সবই ঘটে শাস্ত্রে বাখনি।।

ধৈর্য্য সময় নাই গুন্ একথা শুনেছি বলতে।

ঐশীকৃপা ছাড়া কেউ পারিনা পথ চলতে।।

৫৮তে দ্বারকামাইয়ে ধূনী প্রতিষ্ঠিত।

সেই ধূনী আজও জ্বলছে অবিরত।।

মানবের কল্যাণ হেতু আজও ধূনী জ্বলে।

ভক্তগণ মুক্তি হেতু যায় দলে দলে।।

সেই ধূনীর ভস্ম নিয়ে কোরিয়া প্রণাম।

ফায়ার ঘরে লাভ করি অশেষ কল্যাণ।।

বৃহস্পতিবার শ্রদ্ধায় যে করে সাঁই পূজা।

ধনসম্পদ লাভ করে এ নয় অন্যথা।।

এগারোটি বৃহস্পতিবার যে ব্রতকথা পড়ে।

সাঁইবাবার করুনা পায় প্রফুল্ল অন্তরে।।

যেইজন ব্রতকথা শুনে সারাক্ষন।

সাঁইবাবা দেখা দিয়ে পূর্ণ করে তার মন।।

সাঁইবাবার ব্রতকথা শ্রবণ করি সবে।

তারপর নৈবেদ্য গ্রহণ করিবে।।

সাঁইবাবার আরতি দেখি আনন্দিত মনে।

পবিত্র হয় জীবন তার মুক্তি পায় ধ্যানে।।

সাঁইবাবার ব্রতকথা হইলো সমাপন।

প্রেমানন্দে জয়তু সাঁই বলুন সর্বজন।।

সাঁইবাবা হরে সাঁই হরে সাঁই হরে।

হরে দত্ত হরে দত্ত দত্ত দত্ত হরে হরে।।

                                                                            --------শ্রীমধুসূদন।

---সাঁইবাবার ব্রতকথা সমাপ্ত---

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ