ভগবান শ্রীবিষ্ণুর বরাহ অবতার ধারণের কারণ

 


বিষ্ণুর তৃতীয় অবতার হলো বরাহ অবতার।এই অবতার আবির্ভুত হয়েছিল সত্যযুগে।এই কাহিনীর শুরু বিষ্ণুর ধাম বৈকুন্ঠে।সেখানে অনেক দেবতারা আসতেন বিষ্ণুদেবের পরামর্শ নিতে, সুবিচার চাইতে।বৈকুন্ঠের দরজা পাহারা দিতো জয় ও বিজয়।তার বৈকুন্ঠের দ্বাররক্ষী হিসেবে খুব গর্বিত ছিল।দেব, দানব, গন্ধর্ব, যক্ষ যেই বিষ্ণুদেবের কাছে যেত তাকে জয়-বিজয়ের কাছে অনুমতি নিতে হতো।একবার প্রজাপতি ব্রহ্মার চার পুত্র বৈকুন্ঠে যায় বিষ্ণুদেবের সাথে দেখা করতে।কিন্তু জয়-বিজয় তাদের প্রবেশ অনুমতি দিলো না।তারা সেই চার পুত্রকে অপেক্ষা করতে বলে।বিষ্ণুদেব এখন অন্যকাজে ব্যস্ত রয়েছে।এই কথা শুনে ব্রহ্মার চার পুত্র ক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং চিৎকার করে জয়-বিজয়কে অভিশাপ দিতে লাগলেন।এই চেঁচামেচি শুনে ভগবান বিষ্ণু সেখানে উপস্থিত হলেন।তিনি ব্রহ্মার চার পুত্রকে শান্ত করার চেষ্টা করেন।কিন্তু তাও তারা বার বার অভিশাপ দিতে লাগলো।তারা জয়-বিজয়কে বলতে লাগলো এই বৈকুন্ঠধামে তোমরা আর থাকতে পারবে না।তোমাদের বৈকুণ্ঠধাম ছেড়ে মানুষ হয়ে পৃথিবীতে জন্ম নিতে হবে।বিষ্ণু ব্রহ্মার চার পুত্রকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেন।আপনারা শুধু শুধুই রাগ করছেন।জয়-বিজয় নিজেদের কাজ করেছে মাত্র।তারা আপনাদের অপমান করেননি।কিন্তু ব্রহ্মার চার পুত্র তখন রগে জ্বলছেন।তারা বললেন আমরা কোনো কথা শুনবো না।ওরা আমাদের প্রবেশে বাধাদান করেছে অভিশাপের ফল ওদের ভোগ করতেই হবে।এই বলে তারা ওইস্থান পরিত্যাগ করলেন।তখন বিষ্ণুদেব জয়-বিজয়কে বললেন আর কোনো উপায় নেই।তোমাদের মনুষ্য রূপে পৃথিবীতে জন্ম নিতে হবে।জয়-বিজয় বিষ্ণুদেবকে বললেন, ভগবান আমরা মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করবো কিন্তু আমাদের মুক্তি হবে কিকরে।বিষ্ণু তখন তাদের বললেন, আমার হাতে তোমাদের মৃত্যু হলে তবেই তোমাদের মুক্তি হবে এবং আমি তোমাদের মুক্ত করতে আসবো।জয় ও বিজয় জন্ম নিলেন দৈত্য রূপে।তাদের নাম হলো হিরণ্যকশিপু এবং হিরণ্যাক্ষ।হিরণ্যাক্ষ ব্রহ্মার কাছ থেকে বড় লাভ করলেন যে তাকে দেব, দানব, গন্ধর্ব, যক্ষ, পশুপাখি কেউ বধ করতে পারবে না।তার পায়ের চাপে পৃথিবী কেঁপে উঠলো।তার হুঙ্কারে কেঁপে উঠলো আকাশ।সে দেবতাদের ওপর অত্যাচার শুরু করলো।সেই ইন্দ্রপুরী লুট করলো দেবতারা ভয়ে পৃথিবীর গুহায় আশ্রয় নিলেন।হিরণ্যাক্ষ পৃথিবীটাকেই ডুবিয়ে দিলো সমুদ্রের তলায় পাতালে।তখন পৃথিবীর রাজা মোনো গিয়ে ব্রহ্মাকে বললো পৃথিবী তো পাতালে চলে গেছে এবার আমরা থাকবো কোথায়? হিরোনাখ্য তো সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে।কি করবো আমরা।ব্রহ্মা বললেন আমার বরেই হিরণ্যকশিপু বলীয়ান হয়েছে।আমি ওকে বর দিয়েছি কোনো দেব, দানব, অসুর, মানব, গন্ধর্ব, যক্ষ, পশুপাখি ওর বোধ করতে পারবে না।তোমরা বিষ্ণুদেবের শরণাপন্ন হও।বসুদেব ধ্যানযোগে সব জনতা পারলেন এবং বরাহ রূপে পৃথিবীতে আবির্ভূত হলেন।তার বিশ্ব গর্জনে কেঁপে উঠলো বিশ্ব চরাচর।বরাহ রূপে বিষ্ণু তখন ঝাঁপ দিলেন সমুদ্রে।পাতাল লোকে পৌঁছে দেখলেন পৃথিবী ডুবে রয়েছে।তিনি তখন তার বিরাট দাঁত বের করে সেই জলে নিমজ্জিত পৃথিবীকে তুলতে লাগলেন।এতে সারা বিশ্ব চরাচর কেঁপে উঠলো।হিরণ্যাক্ষ গদা হাতে এলো বরাহর সামনে।সে চিৎকার করে বললো এতো বোরো সাহস তোর আমার জয় করা পৃথিবীর ওপর তুই হাত দিয়েছিস।আমি যেটা জলের তলায় রেখেছিলাম তুই সেটা আবার জলের উপরে তুলেছিস।এখুনি থাম নাহলে গওহর আঘাতে তোকে চূর্ণ করে দেব।কিন্তু বরাহ তাকে কোনো উত্তর দিলো না।পৃথিবীকে জলের উপরে তুলে তাকে মুক্ত করলো।তাকে ঠিক জায়গায় অবস্থিত করলো।এরপর শুরু হলো হিরণ্যাক্ষ-বরাহর ভয়ংকর যুদ্ধ।সেই যুদ্ধে বরাহ হত্যা করলো হিরণ্যক্ষকে।হিরণ্যাক্ষ মুক্তি পেয়ে চলে গেলো বৈকুন্ঠে।দেবতারা ফিরে গেলেন দেবালয়ে।মোনো শাসন শুরু করলো শাসন।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ