শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর ব্রতকথা


 দিলীপ রাজ ক'ন বশিষ্ঠ মুনি প্রতি।শ্রীকৃষ্ণের জন্মকথা শুনিতে সম্প্রতি।।ভাদ্রমাসে কৃষ্ণপক্ষে অষ্টমী তিথিতে।কিবা হেতু জনার্দ্দন জন্মেন ধরাতে।।বশিষ্ঠ কহেন রাজা শুনো ভক্তি মনে।নারায়ণ স্বর্গ ত্যাজি কিসের কারণে।।এই পৃথিবীতে জন্মে দৈবকী উদরে।সেই পুণ্যকথা বলি তোমার গোচরে।।পূর্বকালে কংসাসুর নামে নরপতি।অহংকারে মত্ত হওয়ার থাকি দিবারাতি।।পৃথিবীর দুঃখদশা দেখি শূলপানি।ক্রোধেতে অধীর হয়ে কহে এই বাণী।।দেবগণ চলো যাই ব্রহ্মার সকাশে।করিব উপায় আজি কংসের বিনাশে।।অনন্তর মহেশ্বর দেবগণে লয়ে।গমন করিল সবে ব্রহ্মার আলয়ে।।ব্রহ্মা তখন হংস পৃষ্ঠে করি আরোহন।ক্ষিরোদ সাগরে যান লয়ে দেবগন।।সাগরের তীরে স্তব করে সুরগণ।স্তবে তুষ্ট হলেন দেব নারায়ণ।।কিবা হেতু করেছো হেথায় আগমন।ব্রহ্মা বলিলেন প্রভু করি নিবেদন।।শিববরে বলীয়ান হয়ে কংসাসুর।পৃথিবীরে দেয় সদা যাতনা প্রচুর।।মহেশ্বর  বর ভাগিনার হাতে।নিধন হইবে কংস নহে অন্য হাতে।।দৈবকী উদরে জন্ম করিয়া গ্রহণ।পৃথিবীর দুঃখ দশা করুন মোচন।।নারায়ণ বলিলেন দেব মহেশ্বর।পার্বতীকে সাথে দেন একটি বৎসর।।কার্য শেষে পুনরায় আসিবে চলিয়া।এতো বলি উমা রমা সাথেতে লইয়া।।মথুরা উদ্দেশ্যে যাত্রা করি নারায়ণ।দৈবকী উদরে জন্ম করিলা গ্রহণ।।ভাদ্র মাস কৃষ্ণপক্ষ অষ্টমী তিথিতে।বুধবার রোহিনী নক্ষত্র নিশার্দ্ধেতে।।সর্বদিক আলোকিত করিয়া শ্রীহরি।ধরাধামে অবতীর্ণ শিশুরূপ ধরি।।কেমনে রক্ষিব প্রভু কংসহাত হতে।ভাবিয়া উপায় মোরা নাহি পাই চিতে।।অন্তর্যামী নারায়ণ অন্তরে বুঝিল।পরিধান ত্যাজি প্রভু দ্বিভুজ হইলো।।অনন্তর ভগবান হরির কৃপায়।বাসুদেব শৃঙ্খল হইতে মুক্তি পায়।।মায়াময় শ্রীহরির আশ্চর্য মায়াতে।রক্ষীগণ অচেতন হইলো নিদ্রাতে।।যে সময়ে ভগবান আবির্ভুত হন।যশোদা গর্ভেতে যোগমায়া ব্রজে জন্ম ল'ন।।অতঃপর ভগবান কন বাসুদেবে।নন্দালয়ে তাঁরে রাখি আসিতে হইবে।।নন্দ-কন্যা যোগমায়া শ্রীভগবতীকে।আনায়ন করিয়া দিবেন দৈবকীকে।।যেইকালে বাসুদেব গমন করিল।কারাগারে লৌহদ্বার মুক্ত হয়ে গেল।।মন্দ মন্দ মেঘগণ করিয়া গর্জন।মৃদুমন্দ বৃষ্টিধারা হতেছে পতন।।স্বয়ং অনন্তদেব সর্পরূপ ধরি।বারি নিবারণ জন্য কৃষ্ণ শীর্ষপরি।।ছাত্রের মতন ফণা করিয়া ধারণ।শ্রীবাসুদেব সাথে করেন গমন।।এইভাবে বাসুদেব যাইতে লাগিল।যমুনার তটে আসি উপস্থিত হইলো।।দু-কূলে বহিছে বান বাসুদেব ভাবে।কেমনে হইয়া পার গোকুলে যাইবে।।হায় কি করিব বলি কাঁদিতে লাগিল।অন্তর্যামী নারায়ণ অন্তরে জানিলো।।দেখিতে দেখতে জল আসিল কমিয়া।শিবরূপে পার হয়ে যান মহামায়া।।শিবার পশ্চাৎ ধরি বাসুদেব যান।মায়া করি বারি মধ্যে পরে ভগবান।।বাসুদেব কাঁদে পুনঃ শিরে হাত দিয়া।জলক্রীড়া করে কৃষ্ণ যমুনা লইয়া।।যমুনার পুড়ে সাধ কৃষ্ণকে পাইয়া।কিছুক্ষন পরে কৃষ্ণ উঠিল ভাসিয়া।।সানন্দেতে বসুদেব তুলি নিয়ে কোলে।যমুনা হইয়া পার আসিল গোকুলে।।অনন্তর বসুদেব, আসি নন্দালয়ে।যশোদা নিকটে দেখে কন্যা আছে শুয়ে।।মহামায়া প্রভাবেতে গোপ-গোপী যত।কেহ কিছু নাহি জানে সবে নিদ্রাগত।।যশোদাও পুত্র-কন্যা কিছু না বুঝেছে।জানে কোন দেবরূপী জন্ম লোভেছে।যোগমায়ারুপী কন্যা দৈবকীকে দিয়া।বন্ধন স্থানেতে বসু আসিল চলিয়া।।যোগমায়া প্রভাবে পুনঃবন্ধন ঘটিল।কারাগৃহ পুনরায় আবদ্ধ হইলো।।মহামায়া সদ্যোজাতা শিশুর মতন।ক্রন্দন করিবামাত্র জাগে রক্ষীগণ।।এক রক্ষী কংসপাশে করিয়া গমন।দৈবকী প্রসবে শিশু করে নিবেদন।।বিদিত হইয়া কংস আসি কারালয়ে।দেখিলো দৈবকী কোলে শিশু কন্যা শুয়ে।।ক্রোধে কংস ধরিবারে উদ্যত শিশুরে।দৈবকী কন্যাকে হৃদে জড়াইয়া ধরে।।অশ্রুসিক্ত আঁখি নিয়ে বলে বারে বার।প্রাণভিক্ষা দাও রাজা কন্যারে আমার।।না শুনিয়া তার কথা পাপরূপী কংস।শিশুর করিতে চায় চিরতরে ধ্বংস।।ধরিতে শিশুর পদ উর্ধেতে তুলিল।শিলাপৃষ্ঠ লক্ষ্য করি নিক্ষেপ করিল।।কিন্তু সেই কন্যা কংসহাট হতে।আরও উর্ধে যায় উঠে না পরে শিলাতে।।কন্যা অষ্টভুজা হয়ে মহাদেবীরূপে।বলেন দুরাচার কংস ভূপে।।দুষ্ট দুরাচার কংস শুনরে বচন।কিবা লাভ হবে বধি আমার জীবন।।তোর শত্রু যিনি বালক রুপেতে।দিনে দিনে বর্ধিত হতেছে গোকুলেতে।।অতএব নির্দোষি দৈবকী বসুদেবে।হিংসা করি উভয়েরে কিবা ফল হইবে।।অতঃপর মাতা ভগবতী।গেলেন কৈলাসধামে যথা পশুপতি।।মহামায়া বাক্য কংস করিয়া শ্রবণ।বসু ও দৈবকীর করে বন্ধন মোচন।তৎপরে কিরূপে শত্রু করি বিনাশন।।পরামর্শ করে কংস লয়ে মন্ত্রীগণ।।জন্মাষ্টমী ব্রতকথা হইলো সমাপন।জয় কৃষ্ণ বলি ডাক সর্বজন।।কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ব্রত করে যেইজন।সকল সদিচ্ছা তার হইবে পূরণ।।রোগ শোক দূরে যায় শান্তি পায় মনে।জন্মাষ্টমী ব্রতকথা যেইজন শুনে।।হে গোলকপতি কৃষ্ণ প্রার্থনা চরণে।এ অধমে কৃপা কর আপনার গুনে।।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ