উজানীর মা মঙ্গলচন্ডীর ইতিহাস

     


বর্ধমানের উজানীতে রয়েছে আরও এক সতীপীঠ।অজয় নদের পাশে মা মঙ্গলচন্ডীর মন্দির।কোগ্রামের মঙ্গলচন্ডী মন্দিরের পাশ দিয়ে কুল কুল করে বইছে অজয় নদ।কত মাছ সেখানে! কিন্তু দেবী সেই মাছের একটিও খান না।তাঁর পছন্দ পরম্পরায় দেবীকে যারা পুজো করছে সেই রায় পরিবারের শিঙি-মাগুর মাছ।আসলে এইটুকু আবদার তো দেবী করতেই পারেন।কারণ কথিত আছে দেবীর মন্দির এখানে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এই নির্দিষ্ট গোটা অঞ্চলে কারোর কোনোদিন কোনো অমঙ্গল ঘটেনি।আর এখানেই তো দেবীর মাহাত্ম।

    সীমন্ত সওদাগর মঙ্গলকাব্যের বহুল পরিচিত চরিত্র।তিনি সিংহলে বন্দি হন এবং সেই বন্দি দশা থেকে মুক্ত হওয়ার পর তিনি স্বপ্নাদেশ পান এবং তিনি মানুষের বিশ্বাস, এই সীমন্ত সওদাগর মঙ্গলকোট থানার উজানীর ভূমিপুত্র।তিনি সেই উজানীতে ফিরে এসে স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী কমলেকাননের মূর্তি স্থাপন করেন।যে মূর্তি এখন মঙ্গলচন্ডী রূপে পূজিত হচ্ছে।

    মঙ্গলচন্ডী মায়ের ভোগেও রয়েছে অভিনবত্ব।রায়বাড়ির পুকুরের মাছ হতেই হবে ভোগে।সবদিন মায়ের আমিষ ভোগ হয়।মায়ের ভোগে তিন রকমের ভাজা থাকে,দুটো সব্জির তরকারি দিতে হয়,একটু ডাল দিতে হয়,একটু পায়েশ দিতে হয়।একমাত্র দূর্গা অষ্টমীতে মায়ের ভোগে মাছ দেওয়া হয় না।।সতীর বাম কনুই পড়েছিল এখানে।৫১ সতীপীঠর অন্যতম মঙ্গলচন্ডীর মন্দির।বর্ধমানের কোগ্রামের এই মঙ্গলচন্ডী মন্দিরের ইতিহাস সুপ্রাচীন এবং একই সঙ্গে সমান জাগ্রত এই দেবী।দেবীর আরাধনায় বিশেষত্ব একটাই তা হল প্রতিদিনের ভোগে মাছের ব্যবহার।রায় পরিবার বংশানুক্রমে করে চলেছে দেবীর আরাধনা।



    ৫১ সতীপীঠের অন্যতম পীঠ।দেবীর নাম মঙ্গলচন্ডী ও ভৈরব কপিলেশ্বর।এখানে প্রতিদিন নিত্যসেবা হয় এবং নিত্য ভোগে মাছের ব্যবস্থা থাকে।দুর্গাপুজোর সময় মায়ের বার্ষিক অনুষ্ঠান হয়।ভক্তসমাগম খুববেশি থাকে।কালীপূজোতেও মায়েরবেশ জাকজমকপূর্ণ পুজো হয়।হোম-যজ্ঞ হয়।বৈশাখ মাসের শেষ মঙ্গলবার মায়ের একদিনের বিশাল পুজো হয়।মা মঙ্গলচন্ডী বলে পুরো জ্যৈষ্ঠ মাস মায়ের পুরো হয়।বিপত্তারিণীতেও মায়ের পুজো হয়।

    মা মঙ্গলচন্ডী বিপদ থেকে উদ্ধার করেন এমনটাই বিশ্বাস ভক্তকুলের।কথিত আছে চাঁদ সওদাগরের বংশধর সীমন্ত সওদাগর একবার ভয়ানক বাণিজ্যিক বিপর্যয়ে পড়েন।বহু টাকা লোকসান হয় ব্যাবসায়ীর উজানী গ্রামে ফিরে মঙ্গলচন্ডীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন বণিক।আর সেই থেকেই পূজিত হচ্ছেন মা মঙ্গলচন্ডী।

    বর্তমানে মন্দিরের দায়িত্বে রয়েছেন রায় পরিবার।রায়বংশ স্বপ্নাদেশ পান যে মায়ের পুজো রায় বংশের লোকই করবে।রায় বংশের বংশধরেরা এখন মন্দিরের সমস্ত দায়িত্ব পালন করে।নির্দিষ্ট করে এই মন্দিরে মঙ্গলবার ছাড়া অন্যকোনোদিন পুজোর তেমন কোনো গুরুত্ব বা তাৎপর্য না থাকলেও এই গোটা স্থানের আধ্যাত্বিক মাহাত্ম, নিঃস্তব্ধতা এবং মনোরম পরিবেশ মুগ্ধ করে মানুষকে।মন্দিরের ঘন্টার শব্দ সোনা যায় অজয় নদের অপর পার থেকেও যা অগণিত মানুষকে, দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে এই অনুপম সুন্দর মাতৃমন্দিরের দিকে।

    নতুন মন্দিরে দেবীর কষ্টিপাথরের মূর্তি রয়েছে।আগে অষ্টধাতুর মূর্তি থাকলেও তা একসময় চুরি হয়ে যায়।১৯৯৪ সালে কষ্টিপাথরের এই মূর্তি স্থাপিত হয়।মন্দিরের পাশেই রয়েছে নাটমন্দির।কোগ্রামের একেবারে শেষ প্রান্তে নদীর ধরে হওয়ায় মন্দির এলাকা এখানে বেশ শান্ত।

    এই কোগ্রামেই জন্ম কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিকের।যিনি লিখেছিলেন বাড়ি আমার ভাঙ্গন ধরা অজয় নদের বাঁকে জল সেখানে সোহাগ ভোরে স্থলকে ঘিরে রাখে।

অজয় নদের বাঁকে ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নেমে এল মন্দির থেকে ভেসে আসে ঝাঁজ-কাসর-ঘন্টার শব্দ।মা মঙ্গলচন্ডী-কে শীতল ভোগ নিবেদন করে শুরু হলো সন্ধ্যা আরতি।পঞ্চপ্রদীপের আলোয় ভক্তিতে আবিষ্ট আমরা সকলেই।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ