বৃন্দাবন প্রেমমন্দিরের ইতিহাস


 স্বর্গীয় প্রেমের মন্দির হলো বৃন্দাবন ধামের প্রেম মন্দির।বলা হয়, যদি  কেউ এই পার্থিব জগতের স্বর্গকে স্বচক্ষে দেখতে চান তাহলে মথুরার বৃন্দাবনে অবস্থিত এই অতুলনীয় সৌন্দর্য মণ্ডিত মন্দিরটি যেন একবার দর্শন করেন।অপার্থিব, অসাধারণ, অনুপম, অনন্য এইরকম হাজারো শব্দ ম্লান হয়ে যায় এই মন্দিরের বর্ণনা দিতে গিয়ে।নিতান্ত নাস্তিকও মায়াময় কৃষ্ণপ্রেমে বশীভূত হয়ে যান এই মন্দিরের দৃষ্টিনন্দন পরিবেশে এসে।


    শ্রীধাম বৃন্দাবনের উপকূলে ৫৫ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত অনাবিল সৌন্দর্য্যমন্ডিত এই প্রেম মন্দির।মন্দিরের আরাধ্য দেবতা রাধাকৃষ্ণ ও রামসীতা।২০০১ সালের ১৪ই জানুয়ারী এই মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তরে স্থাপিত হয়েছিল হাজার-হাজার ভক্তদের উপস্থিতিতে এবং এই মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তরে স্থাপন করেছিলেন স্বয়ং জগৎগুরু কৃপালু মহারাজ।এরপরে এক হাজার জন বিচক্ষণ নির্মাণ শিল্পী টানা ১২ বছর পরিশ্রম করেছিলেন এই মন্দিরের নির্মাণ কাজ।২০১২ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী মন্দিরটি উদ্বোধন করে ১৭ই ফেব্রুয়ারী জনসাধারণের উদ্দেশ্যে মন্দিরটি খুলে দেওয়া হয়।শুনতে অবাক করার মতো হলেও সত্যি যে প্রেম মন্দিরটি নির্মাণ করতে মোট ব্যয় হয়েছিল ১৫০ কোটি রুপি।


    বৃন্দাবনের প্রেম মন্দিরটি সম্পূর্ণভাবে ইটালিয়ান সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে নির্মিত।দিনের বেলাতে এর অনুপম চাকচিক্কে যেমন মোহিত হয় ভক্তের হৃদয় তেমন সন্ধ্যা নামলেই বাহারী কৃত্রিম আলোর ফকঝুরিতে মায়াময় হয়ে ওঠে মন্দির চত্বর।মনোমুগ্ধকর এই মন্দিরটির পতাকাসহ মোট উচ্চতা ১২৫ফুট, দৈর্ঘ্য ১৯০ ফুট এবং প্রস্থ ১২৮ ফুট।মন্দিরের ভেতর প্রথম তলায় রাধাকৃষ্ণ এবং দ্বিতীয় তলায় রামসীতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গকৃত।এখানে দেখা মেলে রাধাকৃষ্ণ ও রামসীতার নানা বিবিধ প্রতিকৃতি।মন্দিরের বাইরে চিত্রিত রাধাকৃষ্ণ এবং রামসীতার বহু স্থির চিত্র।



    মন্দিরের পাশেই ৭৩ হাজার বর্গফুটের গম্বুজ আকৃতির পিলার বিহীন সৎসঙ্গপাল।এখানে ২৫,০০০ ভক্ত একসঙ্গে আশ্রয় নিতে পারবেন।মন্দিরের মতো মন্দিরের চত্বরটিও অসাধারণ সজ্জায় সজ্জিত।এই সকল সাজ সজ্জার মধ্যে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন উদ্যান ও রঙিন জলের ফোয়ারা।সন্ধ্যা হলেই এখানে রঙিন ঝর্ণাধারা নৃত্য করে ভোজন সংগীতের তালে তালে।নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে ফোয়ারার মধ্যে ফুটিয়ে তোলা হয় বিভিন্ন চিত্র।এই কারণেই দর্শনার্থীরা রাতেই প্রেম মন্দির দর্শন করতে পছন্দ করেন।


    মন্দির চত্বরে আরও উল্লেখযোগ্য দৃশ্য হল শ্রী কৃষ্ণের চারটি লীলা। প্রথম লীলাটি হল শ্রীকৃষ্ণের ঝুলনলীলা।এখানে দৃশ্যমান ফুলের দোলনায় ঝুলনরত শ্রীকৃষ্ণরাধারানী।তাদের আশেপাশে নৃত্যরত অন্যান্য ব্রজগোপীদের দল।দ্বিতীয় লীলাটি হলো গোবর্দ্ধনলীলা।এখানে দেখা যায় বালক শ্রীকৃষ্ণ তাঁর কনিষ্ঠ অঙ্গুলির মাধ্যমে গোবর্দ্ধন পর্বতকে উঁচু করে রেখেছেন এবং ব্রজবাসীরা সেই পর্বতের নিচে আশ্রিত অবস্থায় আছে।তৃতীয় লীলাটি হলো রাসলীলা।এখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমতি রাধারানী অন্যান্য ব্রজগোপিনীদের সঙ্গে স্বর্গীয় রাসলীলায় মত্ত হয়ে আছেন।চতুর্থ লীলাবিগ্রহটি হলো কালিয়নাগ দমন।এখানে ব্রজের নটখট গোপাল কালিয়নাগের মাথায় চড়ে নৃত্য করছেন। এছাড়াও মন্দির প্রাঙ্গনে নির্মিত হয়েছে একটি প্রদক্ষিণ রাস্তা।যার দ্বারা দর্শনার্থীরা রাধাকৃষ্ণের নানা বিধ লীলাচিত্র ৪৮টি প্যানেল এর মাধ্যমে দর্শন করতে পারেন।






    চমৎকার দেবালয় এই প্রেম মন্দির।অসংখ্য লীলাচিত্র, প্রতিকৃতি স্থাপত্যশিল্প সুবিশাল শিখর স্বর্ণপ্রসাদ, সবকিছু মিলিয়ে এ যেন এক দৈবিক আবহ।যদিও এই মন্দির মানুষের হাতে নির্মিত।তবুও জগতে প্রভুর কৃপা ব্যাতিত এই স্থাপনা নির্মাণ অসম্ভব।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ