রহস্যময় নিধিবন

    


 শ্রীকৃষ্ণের নামে যেন সর্ব ক্লান্তি এক নিমেষেই দূর হয়ে যায়।আর শ্রীকৃষ্ণের লীলাভূমি এই বৃন্দাবন।সেখানে অন্তত একটিবার যাওয়ার জন্য আকুল হয়ে থাকেন কৃষ্ণ ভক্তরা।বৃন্দাবন এমনই এক ধাম যেখানে আজও প্রতিটি স্থানে যেন বিরাজ করছেন স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।এমনই অনুভব করেন যারা বৃন্দাবনে গিয়েছেন।আজ হাজারো রহস্যে গাঁথা শ্রীকৃষ্ণের লীলাভূমি বৃন্দাবন।আজও বৃন্দাবনে গভীর রাতে ভেসে আসে শ্রীকৃষ্ণের বাঁশির সুর।শোনা যায় রাধারাণীর নুপুরের শব্দ।বৃন্দাবনেই আক্ষরিক অর্থ তুলসী গাছের বন।আর এই তুলসীর বন ঘিরে রয়েছে সেই শিহরিত ভক্তিময় রহস্য।আজও সেখানে প্রতিরাতে আসেন স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।

    বৃন্দাবনের অতি প্রাচীন এবং অসাধারণ একটি মন্দির বাঁকে বিহারী মন্দির।অসাধারণ কারুকার্য পুরো মন্দির জুড়ে।আর মন্দিরের ইষ্ট দেবতা রাধাকৃষ্ণ।এই কৃষ্ণের নামই বাঁকেবিহারী।মন্দিরে ঢুকতেই রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহের দিকে তাকালেই মনে হবে যেন সত্যি ভগবান রাধাকৃষ্ণ বিরাজ করছেন।এতটাই জীবন্ত এই বিগ্রহ।বাঁকেবিহারী মন্দিরের ভেতরে ডানদিকে রয়েছে সুবিশাল এক দ্বার।এই দ্বারাই নিধিবন প্রবেশের দ্বার।


    নিধিবনের সব গাছই তুলসীগাছ।কিন্তু সবথেকে আশ্চর্য এই নিধিবনে যে তুলসীগাছ গুলো রয়েছে এই গাছের মতো আর একটি গাছও বৃন্দাবন বা মথুরার কোথাও দেখা যায় না।বৃন্দাবনে অনেক তুলসী গাছ রয়েছে।কিন্তু তা নিধিবনের তুলসীগাছের মতো একেবারেই নয়।পুরো নিধিবন জুড়ে অসংখ্য তুলসীগাছ রয়েছে।এই গাছগুলির ঘনত্ব এতটাই যে নিধিবনে প্রবেশের পর রাস্তা খুঁজে পাওয়া কষ্টকর।এই তুলসীগাছ গুলোর সব কান্ড ফাঁকা।এদের সব শাখা-প্রশাখা নিম্নমুখী।ভক্তরা বিশ্বাস করেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্যই এই গাছগুলো মাথা নিচু করে আছে।নিধিবনের চারপাশের এলাকা একেবারে রুক্ষ।তা সত্ত্বেও এই গাছগুলো সবুজে ভরা।এখানে প্রতিটা গাছ জোড়ায় জোড়ায়।প্রতিটি গাছের নিচে বিশাল গর্ত রয়েছে।


    অনেক বৈজ্ঞানিক এবং ঐতিহাসিক এই নিধিবনের রহস্যভেদ করার অনেক চেষ্টা করেও এই রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেননি।কিন্তু তারা সবাই একটাই কথা বলেছেন এই নিধিবনে এমন কিছু আছে যা বিজ্ঞানের আওতার বাইরে।

    পুরো নিধিবন বিশালাকার প্রাচীর দ্বারা ঘেরা।বনের মধ্যে প্রবেশ করলেই মনে হবে কোনো এক অজানা দৈবশক্তি চালনা করছে সবাইকে।এক অদ্ভুত ঘোরের সৃষ্টি হয়।এইখানের স্থানীয় বাসিন্দা ও মন্দিরের সেবায়িতদের বিশ্বাস এইসব তুলসীগাছগুলো আসলে কৃষ্ণের সাথে থাকা গোপিনীরা আর অষ্টসখীরা।স্থানীয় বাসিন্দা ও ভক্তদের মুখে প্রচারিত আছে যে আজও প্রতি রাতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ,রাধারানী ও গোপিনীদেড় আবির্ভাব ঘটে এই নিধিবনে।

    নিধিবনের মধ্যে একটি জলের কুঁয়ো রয়েছে।যা বিশাখা কুঁয়ো নামে পরিচিত।শোনাযায়, রাসলীলা করতে করতে বিশাখা নামের একজন সখির জলতৃষ্ণা পায়।তখন আশেপাশে জল না পেয়ে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ তাঁর বাঁশি দিয়ে কুঁয়ো খনন করেন এবং বিশাখাকে জলপান করান।রাধারাণীও এই কুঁয়োর জল পান করেছিলেন।


    নিধিবনের ঠিক মাঝখানে রয়েছে এক কক্ষ বিশিষ্ট মন্দির।মন্দিরটির চারপাশ জুড়ে তুলসীগাছে ঘেরা।কক্ষটি খুব একটা বড় নয়।এই মন্দিরটির দ্বারও একটি।আর এই এক কক্ষের মন্দিরটির নাম রঙমহল।সন্ধ্যা আরতির পরে মন্দিরের পুরোহিত রংমহলে শাড়ি, ঘুঙুর, পান, দাঁতন, লাড্ডু, চুরি, টিপ, সিঁদুর, আরও অনেক কিছু রেখে রংমহলের দ্বার বন্ধ করে দেন।আর দ্বারে থাকে বিশাল এক তালা।দ্বার বন্ধ করে পুরোহিত এবং ভক্তরা বেরিয়ে আসেন বন থেকে সাথে সাথে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আর দলে দলে বানর সবাই বেরিয়ে যায় বন থেকে।মনে হবে কোনো এক অলৌকিক শক্তি সবাইকে বাধ্য করছে বন থেকে বেরিয়ে যেতে।সন্ধ্যা হতেই পুরো বন ফাঁকা ও নিস্তব্ধ।এমনকি পুরো বাঁকেবিহারী মন্দিরের দ্বারও বন্ধ করে দেয়া হয় সন্ধ্যার পর।সন্ধ্যার পর নিধিবনে প্রবেশ নিষেধ।আর সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত মন্দিরের দ্বার খোলা হয় না।


    সূর্যোদয়ের পরে মন্দিরের পুরোহিত এবং ভক্তরা জোরে জোরে রাধে রাধে নাম করতে করতে মন্দিরে প্রবেশ করে।রঙমহলের দ্বার খুলতেই গা শিহরিত হয়ে যাবে।আগের দিন রেখে যাওয়া সবকিছু এলোমেলো হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে থাকে পুরো মন্দির জুড়ে।পান চেবানো, শাড়ি অগোছালো, লাড্ডু আধখানা, অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি।আজও প্রতি রাতে রাসলীলা করতে রাধিকা সহিত স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই নিধিবনে আসেন।নিধিবনের আশেপাশের কোনো বাড়ির জানালা-দরজা এই বনের দিকে নয়।


    অনেক ভক্ত নিষেধ করা সত্ত্বেও কৌতহল বশত নিধিবনে রাতে লুকিয়ে প্রবেশ করেছিলেন।শোনা যায় তাদের মধ্যে কেউ পাগল আবার কাউকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, আবার কারো কারো কোনো হদিশ নেই।ওখানকার বাসিন্দারা বলেছেন, গভীর রাতে নিধিবন থেকে ভেসে আসা বাঁশির সুর আর নুপুরের ধ্বনি অনেকেই শুনেছেন।

    গবেষণার সূত্রে নিধিবনে রাতে ক্যামেরাও লাগানো হয়েছিল।কিন্তু আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে যায় সেই ক্যামেরা।আবার সকাল হতেই ক্যামেরা চালু হয়ে যায়।কিন্তু রাতে নিধিবনে কি হয় কোনো বৈজ্ঞানিকই উদ্ঘাটন করতে পারেননি।তবে তাদের সবার একটাই মত এখানে অবশ্যই দৈবপ্রভাব রয়েছে।তারা আরো বলেছেন, যে শক্তি বা রহস্য রয়েছে নিধিবনে তা বিজ্ঞানের আওতার বাইরে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ