ইতুপূজার ব্রতকথা

   


 ব্রতের নিয়ম- কার্তিক মাসের সংক্রান্তিতে একটি পরিষ্কার সরায় মাটি দিয়া ঘটস্থাপন পূর্বক তাহার চারপাশে ধান, হলুদ, মানকচু গাছ  একটি করিয়া বসাইতে হয়।সরিষা, মটর, শুসনী, কলমী ও পাঁচটি ছোট বটের ডাল দিতে হয়।অগ্রহায়ণ মাসের প্রতি রবিবার পুজো করিয়া সংক্রান্তির দিন গঙ্গা, নদী বা পুষ্করণীতে ইতু বিসর্জন করিতে হয়।

    ব্রতের উপকরণ- ফুল, দূর্বা, বেলপাতা, সিঁদুর, তিল, হরীতকী, ধুপ, প্রদীপ, নৈবেদ্য ও সেয়াকুল।

    ব্রতকথা- একগ্রামে ছিল এক ব্রাহ্মণী-ব্রাহ্মণ।বুহুকষ্টে ভিক্ষা করি কাটাত জীবন।।উমনো ঝুমনো তাদের দুই মেয়ে ছিল।পিঠে খেতে ব্রাহ্মণের মনে সাধ হলো।।ভিক্ষা করি ব্রাহ্মণ পিঠের জোগাড় করে।সন্ধ্যাকালে আনি তাহা দিল ব্রাহ্মণীরে।।রাত্রিতে ব্রাহ্মণী পিঠে করিতে লাগিল।গৃহপার্শ্বে বসি ব্রাহ্মণ গুনিতে লাগিল।।পিঠে তৈরী হলে ব্রাহ্মণ বসিল খাইতে।ব্রাহ্মণী আনিয়া পিঠে দিলো তার পাতে।।দুইখানি পিঠে কম হইতে দেখিয়া।রাগেতে ব্রাহ্মণ যেন উঠিল জ্বলিয়া।।ভয় পেয়ে ব্রাহ্মণী তবে বলে ব্রাহ্মণেরে।দুটি পিঠে দিছি আমি দুইটি কন্যারে।।একদা ব্রাহ্মণ আসি ব্রাহ্মণীরে কয়।কন্যাদ্বয়ে লয়ে যাব পিসির আলোয়।।শুনিয়া ব্রাহ্মণী খুব দুঃখিত হইলো।স্বামীর উপরে কিছু বলিতে নারিল।।কন্যা দুটি লয়ে দ্বিজ পথ বাহি যায়।হাঁটিতে হাঁটিতে দুপুর গড়ায়।।ক্ষুদা-পিপাসায় কাতর হইলো কন্যাদ্বয়।ক্লান্ত হয়ে বসে তারা বৃক্ষের তলায়।।অবশেষে কন্যা দুটি ঘুমায়ে পড়িল।ব্রাহ্মণ সুযোগ পেয়ে সেই স্থান ছাড়িল।।নিদ্রাভঙ্গে কন্যাদ্বয় ভাবিতে লাগিল।কোথা পিতা বলি তারা লাগিল ডাকিতে।।উমনো বলে বাবাকে বুঝি বাঘেতে খেয়েছে।ঝুমনো বলে পিত মোদের ত্যাগ করে গেছে।।পিঠে খেয়েছিনু মোরা সেই ক্রোধবশে।নিষ্ঠুর মোদের পিতা দিল বনবাসে।।প্রভাত হইলো নিশি হইলো সকাল।পিঠে খেয়ে দুই বোনের এতেক জঞ্জাল।।কোন দিকে যাবে তারা লাগিল ভাবিতে।ঘন ঘন চারিদিকে লাগিল দেখিতে।।পথে যেতে যেতে তারা দেখে কিছু দূরে।কতগুলি মেয়ে সেথা কিবা পূজা করে।।উমনো ঝুমনো দুই বোন সেই স্টেষনে গেলো।অমনি এটার ঘটে উলটি পড়িল।।কন্যাগণ বলে রাগে হইয়া অস্থির।কে তোমরা অলক্ষ্মী হেথা হয়েছো হাজির।।উমনো ঝুমনো সব কথা বলে কন্যাগনে।শুনি সব কন্যাদের দুঃখ হয় মনে।।কন্যাগন বলে তবে শুনো মন দিয়া।ইতুব্রত কর দুঃখ যাবে ঘুচিয়া।।উমনো ঝুমনো শুনি তাহা ত্বরা স্নান করে।কন্যাগন কন্যাগন সঙ্গে তারা ইতুব্রত করে।।ব্রত শেষে ইতু পাশে বলে দুই বোন।বাপ-মার দুঃখ ইতু কর বিমোচন।।ধন-ধান্যে গৃহ যেন পূর্ণ হয়ে যায়।বর দাও সব ইচ্ছা যেন পূর্ণ হয়।।ঘটে লয়ে দুইবোন যায় গৃহপানে।গৃহে আসি দাঁড়াইল বাড়ির উঠোনে।।ধনৈশ্বর্য পেয়ে দ্বিজ ইতুর কৃপাতে।অট্টালিকা মাঝে বাস করে আনন্দেতে।।কন্যাদ্বয়ে দেখি দ্বিজ লাগিল বলিতে।এতদিন পর তোরা এলি কথা হতে।।পিতৃবাক্য শুনি কন্যাদ্বয় অভিমানে।বলে ধনী হইয়াছ মোদের কারণে।।ইতুব্রত করি মোরা অতি ভক্তিভরে।তাই তুমি রহিয়াছ সুখের মাঝারে।।অতএব ইতুব্রত করো ভক্তিভরে।শোক-দুঃখ, রোগ-ব্যাধি রবে না সংসারে।।এতক্ষন ব্রাহ্মণী তার গৃহ মধ্যে ছিল।কন্ঠরব শুনি মাতা উঠোনে অসিলো।।মাতৃস্নেহে কন্যাদ্বয়ে লইলো বক্ষেতে।আনন্দ-অশ্রুতে বক্ষ লাগিল ভাসিতে।।কন্যাদ্বয় বলে মাতা করি নিবেদন।ভক্তিভরে ইতুব্রত করহ পালন।।শুনিয়া ব্রাহ্মণী তাহা অতি ভক্তিভরে।ইতুব্রত করে সবে প্রতি রবিবারে।।ইতুর কৃপায় সব দুঃখ দূরে গেলো।দরিদ্র ব্রাহ্মণ রাজ ঐশ্বর্য পাইলো।।উমনোর বিভা হইলো রাজপুত্রের সাথে।ঝুমনোর বিভা হয় মন্ত্রীপুত্রের সাথে।।যথাকালে ব্রাহ্মণের এক পুত্র হয়।রূপবান, গুণবান সর্বগুণময়।।সবে মিলে ইতুব্রত করিতে লাগিল।দিনে দিনে ধনৈশ্চর্য বাড়িতে লাগিল।যেই নারী এই ব্রত করে ভক্তিভরে।অভাব রহে না কিছু তাহার সংসারে।।ভক্তিভরে ব্রতকথা যেইজন শোনে।রোগ-শোক-দুঃখ তার রোহে না ভবনে।।ইতুব্রত কথা হেথা হইলো সমাপন।সবে মিলি কর সবে শ্রীহরি স্মরণ।।

            -----অথ ইতুপূজার ব্রতকথা সমাপ্ত-----

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ