শিবরাত্রির ব্রতকথা

ব্রতের নিয়ম- শিবরাত্রির আগের দিন নিরামিষ আহার করে, রাতে বিছানায় না শুয়ে খড়ে বা কম্বলে শুতে হয়।ব্রতের                         দিন উপবাসী থেকে গঙ্গামাটি বা শুদ্ধ মাটি দিয়ে চারটি শিব গড়ে চার প্রহরে একটি করে শিবের পুজো করতে হয়।প্রতিষ্ঠিত শিব থাকলে তাতেই চার প্রহরে চারবার পুজো করতে হয়।প্রথম প্রহরে দুগ্ধ দ্বারা, দ্বিতীয় প্রহরে দধি দ্বারা, তৃতীয় প্রহরে ঘৃত দ্বারা ও চতুর্থ প্রহরে মধু দ্বারা স্নান করাতে হয়।ব্রতের দিন সারারাত্রি জাগরণ করে পরদিন ব্রতকথা শুনে, ব্রহ্মান ভোজন করিয়ে ও সাধ্যমত দক্ষিনা দিয়ে পারণ করতে হয়।

ব্রতের উপকরণ- গঙ্গামাটি বা শুদ্ধমাটি, বিল্বপত্র, গঙ্গাজল, ফুল, দুগ্ধ, দধি, ঘৃত, মধু ও কলা।

ব্রতের ফল- যজ্ঞের মধ্যে যেমন অশ্বমেধ যজ্ঞ, তীর্থের মধ্যে যেমন গঙ্গা, তেমনি ব্রতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো শিবচতুর্দশী                        ব্রত।এই ব্রত পালন করলে ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ চতুর্বিধ ফল লাভ হয়ে থাকে। 

পারণ মন্ত্র- সংসার ক্লেশদগ্ধস্য ব্রতনানেন শঙ্কর।প্রসীদ সুমুখো নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদ ভব।

ব্রতকথা- বহুকাল আগে বারাণসীতে একটি ব্যাধ ছিল।দিনরাত সে শুধু জীব হত্যা করতো।একদিন ব্যাধ শিকার করতে                 গিয়ে প্রচুর পশু-পক্ষী মেরে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই বাড়ির দিকে রওনা হলো।কিছুটা এগোতেই রাত্রি হয়ে গেলো।অন্ধকার রাত্রি, পথ দেখা যায় না, সে তখন এক গাছের নীচে আশ্রয় নিল।কিন্তু গভীর জঙ্গলে হিংস্ৰ জন্তু-জানোয়ারের ডাক শুনে সে ভয়ে একটা গাছে উঠে তার ডালে মাংসের ঝোলা বেঁধে সেই দলেই বসে রইলো।

    গাছটি ছিল বেলগাছ, গাছের নিচে ছিল শিবলিঙ্গ।ব্যাধ গাছের ডালে নড়েচড়ে বসতেই শিশিরে ভেজা একটি বেলপাতা খসে পড়লো সেই শিবলিঙ্গের মাথায়।সেদিন ছিল শিবচতুর্দশী।ব্যাধও ছিল উপবাসী, তাই শিবের মাথায় বেলপাতা পড়তে শিব সন্তুষ্ট হলেন।ব্যাধ কিছুই জানতো না, তবু তার শিবচতুর্দশীর ব্রতের ফল লাভ হলো।সকালে ব্যাধ বাড়ি ফায়ার এলো।সবাই তার জন্য ভাবছিলো।ব্যাধ ফায়ার আস্তে তাকে তার বৌ খেতে দিল।এমন সময় একজন অতিথি এলো।ব্যাধ  কি ভেবে তার খাবার গুলো অতিথিকে খেতে দিলো।তাতে তার পারণের ফল ও লাভ হলো।

        কিছুদিন বাদে ব্যাধ অসুস্থ হয়ে মারা গেলো।যমদূতরা তাকে নিয়ে যাবার জন্য এলো, এমন সময় সেখানে শিবদূতরা এলো।দুজনে যুদ্ধ বেঁধে গেলো, যমদূতরা হেরে গেলো, শিবদূতরা ব্যাধকে কৈলাসে নিয়ে এলো।যমদূতরাও তাদের পিছনে পিছনে ধাওয়া করলো।

            কৈলাসের দ্বারে নন্দী পাহারা দিচ্ছিলো, সে যমদূতদের কাছে ব্যাধের শিবরাত্রির কথা বললো।সব কথা শুনে যমদূতরা ফিরে গিয়ে যমকে সব জানালো।যম বললেন--হ্যাঁ, যে শিব বা বিষ্ণুর ভক্ত আর যে শিবচিতুর্দশী ব্রত করে এবং যে বারাণসী ধামে মারা যায়, তার ওপর আমার কোনো অধিকার থাকে না।তারপর থেকে এই ব্রতের কথা চারদিকে প্রচার হলো।

            ---- অথ শিবরাত্রির ব্রতকথা সমাপ্ত ----

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ